শুক্রবার ২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

মিলার সিন্ডিকেট এখনো বহাল, কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   133 বার পঠিত

মিলার সিন্ডিকেট এখনো বহাল, কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা

বাজারে চালের সরবরাহ পর্যাপ্ত। সরকারের গুদামেও মজুতের কমতি নেই। এমন পরিস্থিতিতে বাজার অস্থিতিশীল করছে চার মিল কোম্পানি। রোজায় অতি মুনাফা করতে মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মিনিকেট চালের দাম ৫০০ টাকা বাড়িয়েছে। এতে খুচরা বাজারেও মূল্য বাড়ছে হু হু করে। পরিস্থিতি এমন- কেজিপ্রতি মিনিকেট চাল কিনতে ক্রেতার সর্বোচ্চ ৯০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ ভোক্তা।

এদিকে গত চার মাস ধরেই অস্থির চালের বাজার। গত বছর ডিসেম্বরে মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল ৩৩০০ টাকা বিক্রি হলেও, জানুয়ারিতে বস্তায় ৬০০-৭০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ৩৯০০ থেকে ৪০০০ টাকা। তবে দাম কিছুটা কমে ১৫ দিন আগে মিনিকেটের বস্তা ৩ হাজার ৮৫০ টাকায় বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার বিক্রি হচ্ছে ৪২০০-৪৪০০ টাকা। মিল পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৫ কেজির বস্তা নাজিরশাইল চাল ১৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ১৫ দিন আগে ২০০০ টাকা ছিল। সেক্ষেত্রে বস্তায় ১০০ টাকা কমেছে। আর বিআর ২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ কেজির বস্তা ২৭০০ টাকা। যা চার মাস আগে ২৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতি বস্তা স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২৪৫০ টাকায়।

চালের দাম বাড়ার প্রসঙ্গে কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মো. সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বৈশাখে নতুন মিনিকেট চাল বাজারে ছাড়া হবে। এখন সব মিলে মিনিকেট নেই। হাতেগোনা চার মিল কোম্পানির (তীর, মঞ্জুর, সারগর ও মোজাম্মেল) কাছে মিনিকেট চাল আছে। তারা এখন বাড়তি দাম দিয়ে আমাদের মতো পাইকারি আড়তদারদের রেট ধরে দিচ্ছে। তিনি জানান, এই চাল নিতে তাদের ধরা রেটেই নিতে হবে। চার কোম্পানি জিম্মি করে রেখেছে। মিল পর্যায়ে তদারকি করলে দাম কমে আসবে। তিনি বলেন, মিল থেকে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মিনিকেট এনে পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি করছি ৪২৫০ টাকা। যা আগে ৩৯০০ টাকা ছিল। বিআর ২৮ জাতের চাল প্রতি বস্তা বিক্রি করছি ২৮৫০ টাকা ও স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি করছি ২৫৫০-২৬০০ টাকা।

রাজধানীর খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা। যা ১৫ দিন আগেও ৭৮ টাকা ছিল। আর একটু ভালোমানের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৯০ টাকা। যা আগে ৮৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিআর ২৮ জাতের চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা ও মোটা জাতের চালের মধ্যে স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৬ টাকা।

মালিবাগ কাঁচাবাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা মো. দীদার হোসেন বলেন, মিল মালিকদের কারসাজিতে গত চার মাস ধরে বাজারে অস্থিরতা চলছে। এর মধ্যে গুটিকয়েক মিলারের কাছে মিনিকেট চাল থাকায় তারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। যে কারণে দাম হু হু করে বেড়েছে। তবে মিল পর্যায়ে তদারকি না করে সংস্থাগুলো খুচরা বাজারে তদারকি করে। তাই দাম কমছে না।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, বাজারে একাধিক সংস্থা তদারকি করে, কিন্তু ভোক্তা এ থেকে সুফল পাচ্ছেন না। পণ্যের দাম বাড়লেই কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু যে স্তরে কারসাজি হয়েছে, সেই স্তরে মনিটরিং হয় না। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোক্তাকে নাজেহাল করার সুযোগ পাচ্ছে।

বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান জানান, প্রতিদিনই বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অনিয়ম সামনে এলেই অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। খাদ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে, সরকারি গুদামে (১৯ মার্চ) খাদ্যশস্য মজুত আছে ১৩ লাখ ৬৩ হাজার ৫২১ টন। এর মধ্যে ৯ লাখ ৬৩ হাজার ৪৮৮ টন চাল এবং ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৮৬২ টন গম রয়েছে। বাকিটা ৬২৭৬ টন ধান মজুত আছে। এছাড়া চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে নভেম্বরে আমদানির ওপর ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর রেখে বাকি আমদানি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে নীতি সহায়তা নিলেও অসাধুদের কারসাজিতে ক্রেতার পকেট ফাঁকা হচ্ছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বল্প মূল্যে চাল সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় সচেষ্ট আছে। মার্চ ও এপ্রিল মাসে সরকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ওএমএস, ভিজিডি, টিসিবি ও এমএস এর মাধ্যমে প্রায় ৭ লাখ টন চাল বণ্টন করবে। এছাড়া আসন্ন বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তখন চালের মূল্য আরও কমে আসবে। খাদ্য ঘাটতি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্যে রেখে সরকার খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত গড়ে তুলেছে। চালের দর যাতে স্থিতিশীল থাকে সে জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় বিদেশ থেকে চাল আমদানিও অব্যাহত রেখেছে। খাদ্য মূল্য সহনশীল পর্যায়ে রাখার জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। দেশে কোনো খাদ্য সংকট হবে না।

Facebook Comments Box

Posted ৪:৫৪ এএম | শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।