নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫ | প্রিন্ট | 137 বার পঠিত
ইসলামের শ্রেষ্ঠ বিজয় ও মানবতার চূড়ান্ত বিজয় সংঘটিত হয় অষ্টম হিজরির ১৯ রমজান। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আগমনের পর দ্বিতীয় হিজরিতে কুরাইশরা মদিনা আক্রমণ করে। পরে সংঘটিত হয় বদরের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে কুরাইশরা চরমভাবে পরাজিত হলেও পরের বছর তৃতীয় হিজরির ৭ শাওয়াল (২৩ মার্চ ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দ) শনিবার তারা আবার মদিনা আক্রমণ করে। সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক ওহুদের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে সাহাবিরা নবীজি (সা.)–এর নির্দেশনা ভুলে যাওয়ার কারণে মুসলমানদের পরাজয় হয়।
এরপর ষষ্ঠ হিজরির জিলকদ মাসে নবীজি (সা.) ওমরাহর উদ্দেশ্যে দেড় হাজার সাহাবি নিয়ে মক্কার দিকে রওনা হন। কুরাইশরা বাধা দিলে নবীজি (সা.) হুদায়বিয়া নামক জায়গায় অবস্থান করেন। সেখানেই সম্পাদিত হয় ইতিহাসখ্যাত ‘হুদায়বিয়ার সন্ধি’, যা বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম লিখিত সন্ধিচুক্তি।
হুদায়বিয়ার সন্ধির পর মক্কার ‘বনু খোজায়া’ গোত্র হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর সঙ্গে ও ‘বনু বকর’ গোত্র কুরাইশদের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি করে। এ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে পূর্বশত্রুতা ছিল। কুরাইশদের প্ররোচনায় ‘বনু বকর’ রাতের অন্ধকারে অতর্কিতে ‘বনু খোজায়া’ গোত্রের আবাসভূমি ‘ওয়াতির’–এর নিভৃত পল্লিতে হামলায় অসহায় নারী ও শিশুদের নির্বিচার হত্যা ও লুণ্ঠন করে।
প্রাণভয়ে পবিত্র কাবাঘরে আশ্রয় নেওয়া নিরীহ মানুষকেও তারা হত্যা করে। এ ঘটনার প্রতিকারের জন্য খোজায়া সম্প্রদায় মদিনার মিত্র মুসলমানদের সহযোগিতা চায়।
হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই অপকর্মের প্রতিকারের জন্য দূত মারফত মক্কার কুরাইশ নেতাদের বলেন, ‘তোমরা বনি খোজায়া গোত্রকে উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাও, নয়তো বনু বকর গোত্রের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি বাতিল করো; না হলে হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্ত লঙ্ঘন হেতু এ চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে।’ কুরাইশ নেতারা তৃতীয় পন্থাই গ্রহণ করল এবং চুক্তি বাতিল করল। বিশ্বমানবতার কেন্দ্রভূমি মক্কা মুকাররমাকে পঙ্কিলতামুক্ত করার জন্য অষ্টম হিজরিতে বিশ্বনবী নীরব আয়োজন করলেন।
১৯ রমজান মক্কা বিজয়ের দিন সকালে নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কিরামের বিভিন্ন দলকে মক্কার বিভিন্ন দিক থেকে প্রবেশের নির্দেশ দিলেন এবং বললেন, ‘কাউকে আক্রমণ করবে না।’ এভাবে জানের দুশমনদের প্রাণের দোসর বানিয়ে মানবসভ্যতার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন তিনি।
রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত ওসামা ইবনে জায়েদের সঙ্গে উটে চড়ে অবনত মাথায় সবার শেষে মক্কা মুকাররমায় প্রবেশ করলেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কাবাসীদের নিয়ে একটি সভা করলেন। সভায় ভাষণে তিনি সাম্য, মৈত্রী ও একতার কথা বললেন, ‘হে কুরাইশরা! অতীতের সব ভ্রান্ত ধারণা মন থেকে মুছে ফেলো, কৌলীন্যের গর্ব ভুলে যাও, সবাই এক হও। সব মানুষ সমান, এ কথা বিশ্বাস করো।’ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সবাইকে এক নারী ও পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের গোত্রে ও সম্প্রদায়ে পৃথক করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হতে পারো। নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে–ই বেশি সম্মানিত, যে বেশি পরহেজগার।’ (সুরা-৪৯ হুজুরাত, আয়াত: ১৩)
Posted ১২:১৩ পিএম | বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।