রবিবার ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

বড় প্রতিষ্ঠানের ছোট ব্যবসায় জড়ানো উচিত নয়: এনবিআর চেয়ারম্যান

  |   সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   32 বার পঠিত

বড় প্রতিষ্ঠানের ছোট ব্যবসায় জড়ানো উচিত নয়: এনবিআর চেয়ারম্যান

বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ছোট ব্যবসায় জড়ানো উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘বড় বড় শিল্প গ্রুপ যদি এসএমইর (ক্ষুদ্র ও মাঝারি) ব্যবসা খেয়ে ফেলে তাহলে তো হবে না। উন্নত দেশ হতে আমাদের যে বড় বড় শিল্প করতে হবে সেসব বিনিয়োগ কে করবে? আমার মনে হয়, নির্দিষ্ট করে দেয়া দরকার যে, কে কোন ব্যবসা করতে পারবেন। এগুলো শিল্প বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে করতে হবে। আমাদের কোম্পানি আইনে এগুলো অবারিত করা আছে। বড় বড় গ্রুপ এখন আসুক, হেলিকপ্টার বানাক, গাড়ি বানাক। তাদের আর মুড়ি না বানানোই ভালো। তাদের মুড়ি ভাজার দরকার নেই। তাহলে বড় ব্যবসার পাশপাশি ছোট ব্যবসায়ও দ্রুত বিকশিত হবে। দ্রুত আমাদের দেশ ভালো করবে।’

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের নতুন ভবনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) নেতাদের সঙ্গে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় রাজস্ব বোর্ড প্রধান রহমাতুল মুনিম এসব কথা বলেন।

বিশ্বে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘বড় বড় গ্রুপ যদি বড় বড় ব্যবসা করে তাহলে দেশের উন্নতি হবে দ্রুত। তাদের এসএমইর ব্যবসাগুলো না করাই ভালো। বড় ব্যবসা করতে বড় বিনিয়োগ লাগে। বেশি অভিজ্ঞতা লাগে। তাই এর মধ্যে যারা দেশে ব্যবসা করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এবং বড় বড় শিল্প গড়ে তুলেছেন তাদের এখন উচিত আরও বড় বড় শিল্প গড়ে তোলা। কিন্তু তারা যদি কম বিনিয়োগ করে সেসব ব্যবসা করে তাহলে ছোট ব্যবসায়ীরা টিকতে পারবেন না।’

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের দেশকে আরও এগিয়ে নিতে হলে ভারী শিল্প দরকার। বড় বড় বিনিয়োগ করতে হবে। আর এই বড় বড় বিনিয়োগ কারা করবেন? বড় বড় গ্রুপ যারা আছে তারাই করবে। আর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হলে আমাদের এসএমইকে সাপোর্ট দিতে হবে। বড় বড় শিল্প গ্রুপ যদি এসএমইর ব্যবসা খেয়ে ফেলে তাহলে তো হবে না। উন্নত দেশ হতে হলে আমাদের বড় বড় শিল্প গড়ে তুলতে হবে, আর সেটা বড় বড় গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠানকে করতে হবে।

সভায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে জনবান্ধব করতে ইআরএফের পক্ষ থেকে ২৩টি প্রস্তাব দেয়া হয়। এই প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। এ সময় সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম ও অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ইআরএফের পক্ষে থেকে বলা হয়, বাজেট যে সাধারণ মানুষের জন্য হয় সেটা বোঝা যায় না। আগামী বাজেটে যাতে সেটার প্রতিফলন থাকে। এর উত্তরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বাজেট সাধারণ মানুষের জন্যই হয়, কিন্তু মানুষের সেটা বোঝার ক্ষমতা নাই।

এ প্রসঙ্গে রহমাতুল মুনিম বলেন ‘বাজেট যে আমার জন্য করা হয়েছে, সেটা বোঝার মতো অর্থনৈতিক জ্ঞান সাধারণ মানুষের নাই। বাজেট থেকে যদি কাউকে সরাসরি টাকা দেয়া হয়, তাহলে মনে হয় পেয়েছি। যদি সরাসরি না যায় তাহলে মনে হয় আমি কিছুই পাইনি। আমাদের যা কিছু করা হয় বাজেটে। সবকিছু করা হয় রাষ্ট্রের জনগণের আয় বাড়ানোর জন্য। কিন্তু এই যে দেখা যায় না। আমরা অভ্যস্থ হয়ে গেছি সরাসরি আমি কী পেলাম সেটা জানতে। আমার হাতে এনে দাও। আমার কাছে এনে দাও। পদ্মা সেতু সবার কাজে লাগবে। একটি হাসপাতাল হলে সবার কাজে লাগবে। কিন্তু আমরা দেখি বাজেটে কোন ছাড়টা দেয়া হলো। কোনটা আমরা পাব।’

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাজেট করা হচ্ছে দেশীয় শিল্পকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য। মেড ইন বাংলাদেশ পরিকল্পনাটা নিয়ে আমরা বাজেট সাজিয়েছি। আমরা বলছি, দেশের মধ্যম আয়ের মানুষকে পরিকল্পনার মধ্যে নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। এই মধ্যম আয়ের মানুষের যে চাহিদা সেটার একটি বড় বাজার আছে। এই চাহিদা এখন পূরণ করছে আমদানি করা পণ্য। মাইক্রো ওভেন থেকে শুরু করে প্রেশার কুকার অথবা ডাইপার এসব পণ্যের আমদানি আমরা শূন্যতে নামিয়ে আনতে চাই। এটাকে সামনে রেখে আমরা কাজ করছি। এর ফলে আমাদের জিডিপি বাড়বে, সঞ্চয় বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে। এগুলোকে মাথায় নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা সেভাবেই কাজ করছি যাতে কর্মসংস্থান বাড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এগুলো করতে গিয়ে দেখছি, কীভাবে বড় শিল্পগুলোকে সাহায্য করা যায়। পাশাপাশি কোথায় এসএমইগুলোকে সাহায্য করা যায়। আমাদের সব কাজই কিন্তু শেষে গিয়ে সাধারণ জনগণের জীবনকে প্রভাবিত করবে। বড় শিল্প কী পেল এই প্রশ্ন বা বেশি পেল কি না, সেই প্রশ্ন বারবারই আসে। মুক্তবাজার অর্থনীতির ক্ষেত্রে এটাই তো নিয়ম।’

ইআরএফের বাজেট প্রস্তাবনায় বলা হয়, এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ভারতের চেয়েও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। ভারত সরকারের সম্প্রতি ঘোষিত বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৭ লাখ রুপি নির্ধারণ করেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সীমিত আয়ের জনগণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয় মতবিনিময় সভায়।

আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে আগামী বাজেটে কর-জিডিপির অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে, পরের দুই বছরও শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ও শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ হারে বাড়াতে হবে। এ বাড়তি রাজস্ব আহরণে করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানো, অটোমেশনের মাধ্যমে কর কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার প্রস্তাব করা হয় ইআরএফের পক্ষ থেকে।

২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ধাক্কা সামলাতে এখন থেকেই গতিশীল রাজস্ব প্রশাসন গড়ে তোলার কথা বলেছে ইআরএফ। সেই সঙ্গে ডব্লিউটিও বাউন্ড ট্যারিফ কার্যকর করার প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম আগামী অর্থবছর থেকেই শুরু করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন-পরবর্তী প্রতিযোগিতামূলক অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার জন্য দেশীয় শিল্পের সক্ষমতা বাড়াতেও পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে।

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিষয়টি বিবেচনায় রেখে শুল্কহার যৌক্তিক করার কাজ আগামী বাজেট থেকেই শুরু করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

শুল্কহার এলডিসিগুলোর গড় শুল্কহারের তুলনায় বেশি এবং প্রোটেকটিভ ট্যারিফ গড়ে ২৮ শতাংশ উল্লেখ করে প্রস্তাবনায় বলা হয়, ‘এ হার কমিয়ে আনতে হবে। যাতে এফটিএ করার পর রাজস্বের ধাক্কা একবারে না আসে।’

ইআরএফের অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে বেসরকারি খাতে কর অব্যাহতির সুবিধা ৩ বছর করা, আগাম কর রিফান্ড ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, ইটিআইএনধারীদের রিটার্ন দাখিলে বাধ্য করা, রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের দক্ষতা অর্জনে বিনিয়োগ বাড়ানো ইত্যাদি।

পাচার হওয়া অর্থ দেশে আনার জন্য এবারের বাজেটে যে সুবিধা দেয়া হয়েছে, তার সুফলও মিলছে না উল্লেখ করে এ অবস্থায় মুদ্রা পাচার রোধে ভারত, চীন অথবা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কঠোর আইন প্রণয়নের সুপারিশ ছাড়াও পরিবেশবান্ধব বা সবুজ শিল্পায়নে বিনিয়োগ উৎসাহিত করার করার প্রস্তাব করেছে ইআরএফ।

Facebook Comments Box

Posted ১২:২২ এএম | সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।