খেলাধুলা ডেস্ক | মঙ্গলবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট | 48 বার পঠিত
দুই বছর আগে নারী লিগে এএফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন। ২০২২ সালের লিগে প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করেছিলেন মোসাম্মৎ সাগরিকা। সেই থেকে ফুটবলার বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকা কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের নজরে পড়েন সাগরিকা। সে সময় একটি ম্যাচে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে তিন প্লেয়ারকে কাটিয়ে ঠান্ডা মাথায় নিখুঁত ফিনিশিং করেছিলেন তিনি, তাতেই ছোটন বুঝতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের নারী ফুটবলের ভবিষ্যৎ ঠাকুরগাঁওয়ের এ ফুটবলকন্যা।
নিজের কাছে থাকা নোটবুকে প্লেয়ার বাছাইয়ের তালিকায় সাগরিকাকে রাখেন এক নম্বরে। নিয়ে যান বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ক্যাম্পে। কিন্তু তখনকার টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি তাতে বাদ সাধেন। শারীরিক গড়ন হালকা-পাতলা হওয়ায় স্মলি নিতেই চাননি সাগরিকাকে। এমনকি বারবার জিজ্ঞেস করেন, ‘হু চয়েস হার’। তখন ছোটন সরাসরিই বলে দেন, ‘আমি চয়েস করেছি’।
এর পর অনেক লড়াইয়ের পর এ ফরোয়ার্ডকে ক্যাম্পে সুযোগ দিলেও ২০২৩ সালের এপ্রিলে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বেও দলের সঙ্গে তাঁকে নিতে চাননি স্মলি। সেখানেও অনেকটা জোর করে এ ফুটবলারকে সিঙ্গাপুরে দলের সঙ্গে নিয়ে যান ছোটন। তাঁর হাত ধরে বাফুফেতে ঢোকা সাগরিকার আজকে এই পর্যায়ে আসার পেছনের গল্পগুলো সোমবার সঙ্গে এভাবেই বলেন বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দলের এ কোচ, ‘লিগে খেলা দেখে বাফুফে অনূর্ধ্ব-১৫ ক্যাম্পের জন্য বাছাই করেছিলাম। শারীরিক কন্ডিশন দেখে তখনকার পরিচালক (পল স্মলি) তাকে নিতে চাননি। আমি জোর করে নিয়েছিলাম। নেপাল ও ভারতের বিপক্ষে তার তিনটি চোখ ধাঁধানো গোলই প্রমাণ করেছে প্রতিভা চিনতে ভুল করিনি আমরা।’
অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দুই ম্যাচে তিন গোল করে আলোচনায় বাংলাদেশের সাগরিকা। নেপালের বিপক্ষে দুই এবং রোববার কমলাপুর স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে করেন দলের জয়সূচক গোল। বিশেষ করে ভারতের বিপক্ষে তাঁর করা গোলটি দেখে অনেকেই বলেছেন ‘নিখুঁত’ ফিনিশার। কারণ সতীর্থের কাছ থেকে উড়ে আসা বলে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন সাগরিকা, এর পর তাঁর পেছনে থাকা ভারতের দুই ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে একেবারে ঠান্ডা মাথায় বল জালে পাঠান তিনি।
সেই গোল দেখার পর সাবেক শিষ্যকে এভাবেই মূল্যায়ন করেছেন ছোটন, ‘ডি বক্সের আশপাশে বল থাকলে সে কয়েকজনকে কাটিয়ে সুন্দরভাবে গোল করতে পারে। তার মধ্যে আলাদা স্কিল আছে। তার কিছু গুণের জন্যই কিন্তু আমরা বাফুফেতে নিয়েছিলাম। এখন তার খেলা দেখে নিন্দুকেরা অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন, তারা ভুল ছিলেন।’
ঠাকুরগাঁওয়ের রাঙ্গাটুকী একাডেমিতে ফুটবল শেখা সাগরিকার। ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক তাজুল ইসলামই এ প্রতিভাবান ফুটবলারকে খুঁজে বের করেন। কিন্তু সমাজের মানুষের কটু কথার ভয়ে চায়ের দোকানি বাবা লিটন আলী কোনোমতেই মেয়েকে ফুটবলে নাম লেখাতে দিতে চাননি। কিন্তু সাগরিকা ছিলেন একটু বেশিই জেদি। নিজের এক খালার প্রেরণায় আর তাজুল ইসলামের হাত ধরে সব বাধা পেরিয়ে সাগরিকা এখন বাংলাদেশ নারী ফুটবলের তারকা।
Posted ১২:২৮ পিএম | মঙ্গলবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।