শনিবার ২৫শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

ঢাকঢোল পিটিয়ে চিনির দাম বাড়ানো ভোক্তাদের সঙ্গে ‘তামাশা’ ছাড়া আর অন্য কিছু নয়

  |   বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   15 বার পঠিত

ঢাকঢোল পিটিয়ে চিনির দাম বাড়ানো ভোক্তাদের সঙ্গে ‘তামাশা’ ছাড়া আর অন্য কিছু নয়

আবারোও কেজিপ্রতি ৫ টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনি ১০৭ ও প্যাকেটজাতের দাম ১১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরএ)।

এটি আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। কিন্তু বর্তমানে প্রতিকেজি খোলা চিনির দাম ১০২ টাকা নির্ধারিত আছে। আর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। সেক্ষেত্রে নতুন দাম কার্যকরের পাঁচ দিন আগেই কেজিতে ১৮ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ আগের নির্ধারিত দামের কোনো তোয়াক্কা করছেন না বিক্রেতারা। নতুন করে আবার ঢাকঢোল পিটিয়ে দাম বাড়ানোর ঘোষণাকে ভোক্তাদের সঙ্গে এক রকম ‘তামাশা’ করা ছাড়া আর অন্য কিছু নয়-এমনটি মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, সরকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবসায়ীরা দাম নির্ধারণ করে। সরকারকে মূল্য বৃদ্ধি কম দেখালেও বাজারে চিত্র পুরোপুরি উলটো হয়। যে হারে দাম বাড়ানো হয় বাজারে তার চাইতেও বেশি দাম দেখা যায়। যেটা এক ধরনের তামাশা। তাই দাম নির্ধারণের সময় সংশ্লিষ্টদের আরও নজরদারি করে দেখতে হবে। দাম বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তি দেখেই দায়িত্ব শেষ না করে, বাজারে কি হচ্ছে তা তদারকি করতে হবে। এতে ভোক্তার উপকার হবে।

বৃহস্পতিবার এমসিসিআই’র অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, চিনির দাম বাড়ানো সঠিক সিদ্ধান্ত। মূল্যবৃদ্ধি তখনই করা হয় যখন প্রয়োজন হয়। মূল্যায়ন করেই এটা করা হয়। যে দাম হওয়া উচিত বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ করেই এটা করে। সে হিসাব-নিকাশ করে চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে। এটা যদি চিহ্নিত না করা হয় তাহলে ফলাফল ভিন্ন হবে। বাজারে চিনি পাওয়াই যাবে না। এটা বিবেচনা করে যেটা হওয়া উচিত সেটা করা হয়েছে। আবার যখন কমার প্রয়োজন তখন কমাবে।

এদিকে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির ঊর্ধ্বমুখী দাম, ডলারের বাড়তি বিনিময় হার এবং স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদন ব্যয় বিবেচনা করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে যে দাম নির্ধারণ করা হয়, সেই দামেই বাজারে বিক্রির জন্য সরবরাহ করা হয়। তবে মাঝে পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতারা যদি কারসাজি করে সেক্ষেত্রে অ্যাসোসিয়েশন দায় নেবে না।

প্রসঙ্গত, গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই চিনির দাম বাড়তে থাকে। এর মধ্যে ডলার ও জ্বালানি সংকটের কারণে গত বছরের জুলাই-আগস্ট থেকে চিনির বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় গত সেপ্টেম্বরে সরকার প্রথমবারের মতো চিনির দাম বেঁধে দেয়।

এরপর আরও দুই দফা দাম বাড়ায় সরকার। সংকট কাটাতে বাজারে চালানো হয় অভিযান। এতকিছুর পরও বাজারে চিনির সংকট কাটেনি। পরে নভেম্বর মাসে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি প্যাকেট চিনি ১০৭ ও খোলা চিনি ১০২ টাকা নির্ধারণ করে। যা এখন পর্যন্ত এই দাম কার্যকর আছে। তবে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্যাকেট চিনি না পাওয়া গেলেও খোলা চিনি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। যা সাত দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১১৫ টাকা। দেখা গেছে নির্ধারিত দামের তুলনায় কেজিতে খোলা চিনি ১৮ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা সালেকিন বলেন, দফায় দফায় চিনিরি দাম বাড়ানো হচ্ছে। তবে যতবার চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, ততবার খুচরা বাজারে নির্ধারিত দামের তুলনায় ১৫-২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই। তাছাড়া সামনে রমজান মাস। দেখা যাচ্ছে-এখন থেকেই সব ধরনের পণ্যের দাম হু-হু করে বাড়ছে। সেদিকে সংশ্লিষ্টদের নজর দিতে হবে।

একই বাজারে মুদি বিক্রেতা মো. শামীম বলেন, গত কয়েক মাস মিল পর্যায় থেকে চিনির সরবরাহ কমানো হয়েছে। পরিবেশকরাও চিনি দিচ্ছে না। দাম বাড়ানোর জন্যই তারা এমনটা করছে। রোজার আগে কয়েক দফায় দাম বাড়ছে। তবে তারা কাগজে-কলমে যে দাম নির্ধারণ করছে, সে দামে চিনি বাজারে দিচ্ছে না। যে কারণে নির্ধারিত দামের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, এটা সত্য গতবার চিনির দাম বাড়ানোর পর বাজারে একটু বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে এবার আর এ সুযোগ নিতে দেওয়া হবে না। কোন পর্যায় থেকে সমস্যা-সেটা বের করে প্রয়োজনে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।

অন্যান্য পণ্যেও বাড়তি দর : বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে সরু চাল, ব্রয়লার মুরগি, ডিম, পাম অয়েল, রসুন, আলু, শুকনা মরিচ ও জিরা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি সরু চালের মধ্যে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৭ টাকা। যা সাত দিন আগে ৬৫ টাকা ছিল।

প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকা। যা সাত দিন আগে ১৫০ টাকা ছিল। প্রতি হালি (৪ পিস) ফার্মের ডিম ৩ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লিটারে ৫ টাকা বেড়ে পাম অয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে দেশি রসুন ১৫০ ও আমদানি করা রসুন ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, যা আগে ২৫ টাকা ছিল। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি শুকনা মরিচ ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জিরা বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা। যা সাত দিন আগে ৬৫০ টাকা ছিল। সেক্ষেত্রে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পণ্যটির দাম ১০০ টাকা বেড়েছে।

Facebook Comments Box

Posted ১০:৩৪ পিএম | বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(160 বার পঠিত)
ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।