রবিবার ১৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দিয়ে রোগী হয়রানি করবেন না: রাষ্ট্রপতির

  |   মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   23 বার পঠিত

অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দিয়ে রোগী হয়রানি করবেন না:  রাষ্ট্রপতির

বিশ্বের বুকে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয় নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ৪র্থ সমাবর্তন। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ চিকিৎসকদের অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দিয়ে রোগীদের হয়রানি না করার আহ্বান জানান।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, বিএসএমএমইউ এর আউটডোরে প্রায়শই সকালে ল্যাবরেটরি বিভাগ খোলা হয় না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এর ফলে রোগীদের রিপোর্ট সংগ্রহে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। সক্ষমতার দিক থেকে বিএসএমএমইউকে ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক।

জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরণের অবহেলা, দায়িত্বহীনতা ও প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগ নেই। চিকিৎসার নামে সাইনর্বোড সর্বস্ব ও দালান-নির্ভর সব ধরনের প্রতারণা বন্ধ করতে প্রশাসনিক উদ্যোগের সঙ্গে চিকিৎসকদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, কিছুসংখ্যক অসাধু ও প্রতারক চিকিৎসকের জন্য যাতে চিকিৎসার নামে গোটা চিকিৎসক সমাজের সুনাম ক্ষুণ্ণ না হয়, সেদিকেও সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই দেখা যে, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো রোগীদের জিম্মি করে ব্যবসা করে। অনেক সময় দালালদের খপ্পরে পড়েও রোগীরা, বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা রোগীরা, চরম হয়রানির শিকার হন। তিনি বলেন, মানবসেবা একটি স্বর্গীয় গুণ। রোগাক্রান্ত মানুষ সৃষ্টিকর্তার পর একজন ডাক্তার ও নার্সের ওপর ভরসা রাখেন। আপনাদের ভালো ব্যবহার ও চিকিৎসা যে কোনো রোগীর পরম কাম্য।

আবদুল হামিদ বলেন, চিকিৎসা সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশেও  বিদেশের মতো বাণিজ্যিক নামের পরিবর্তে সাধারণ নাম চালু করার বিষয়টি ভাবতে হবে। রাষ্ট্রপ্রধান চিকিৎসা সেবায় গবেষণা কার্যক্রমের উপর গুরুত্ত¡ারোপ করে বলেন, কালের  বিবর্তনে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যমৃষ্ট বহুবিধ কারণে রোগ-জীবাণুর ধরণ ও প্রকোপ পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে মানব জাতির জন্য হুমকি মোকাবিলায় বিভিন্ন রোগের কারণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার নির্ণয়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নত গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ এই সমাবর্তনে ‘সমাবর্তন বক্তা’ হিসেবে বক্তব্য দেন ভারতীয় ইউনিভার্সিটি সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাজ-বর্ধন আজাদ। ‘দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে চিকিৎসা শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিচর্যার আন্তঃবিবর্তন- বিবর্তন, চ্যালেঞ্জ এবং এগিয়ে যাওয়ার পথ’ শীর্ষক বক্তব্যে চিকিৎসা শিক্ষায় চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন,  দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের চ্যালেঞ্জটি বিশাল এবং সর্বোত্তম উপায় হল প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করা। সংস্কৃতি, ভাষা এবং ভূগোলের বৈচিত্র্য এই অঞ্চলে চিকিৎসা শিক্ষা এবং মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। আরেকটি দিক হল নিম্নœ মধ্যম এবং ধনী স¤প্রদায়ের বিস্তৃত বিভাজন এবং যারা বস্তি বা গ্রামে বসবাস করে তারা উচ্ছেদ এবং স্থানান্তরের ক্রমাগত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাদের একটি অবিচ্ছিন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করা সমস্যাযুক্ত হতে পারে। একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যবর্তী পদক্ষেপ হবে দরিদ্র মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা।

লিঙ্গ বৈষম্য এবং অসমতার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা আমাদের সংস্কৃতি ও অঞ্চলের অন্তর্নিহিত। এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়া বৈপরীত্যের বিশ্ব। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সত্তে্বও, এই অঞ্চলে এখনও দ্বিতীয় বৃহত্তম সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্যের চাহিদাও অনেক বেশি। স¤প্রদায়-ভিত্তিক চিকিৎসা শিক্ষা আংশিকভাবে এই চাহিদাগুলিকে সমাধান করতে পারে এবং বেশ কয়েকটি স¤প্রদায়ের স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে কোভিডের পরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে গুরুতর বায়ু দূষণ কোভিড-পরবর্তী জটিলতার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। মেডিকেল ছাত্রদের স্বাস্থ্যের উপর দূষণের প্রভাব এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস এবং স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব মোকাবেলার পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে শেখানো উচিত।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যে পরিবর্তন এনেছেন তা বিশ্বের কাছে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারীসহ অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের স্বাস্থ্যখাত যে কাজ করে যাচ্ছে তা দৃষ্টান্তমূলক। এ ধারা অব্যাহত রাখতে চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ দিয়ে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রাখতে হবে।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার তার সবকিছুই করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের বুকে একটা রোল মডেল হিসাবে প্রতিষ্ঠা করব এই হলো চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপাচার্য হিসেবে আমার অঙ্গীকার।

এ সময় স্বাগত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১০৫টি পোষ্টগ্রাজুয়েট কোর্স পরিচালনা করা হচ্ছে অন্যান্য ৪১টি মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে- এর মধ্যে ৬২টি রেসিডেন্সী কোর্স রয়েছে। চালু হয়েছে এমএসসি নার্সিং কোর্স। প্রতিদিন বহির্বিভাগে প্রায় ৮০০০ থেকে ৯০০০ রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করে সন্তুষ্টি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।

ইতিমধ্যেই চালু করেছি ১৫টি ডিভিশন, খোলা হয়েছে নতুন ৭টি বিভাগ এবং ডেন্টালের ৫টি বেসিক কোর্স। দীর্ঘ ২৪ পর ফরেনসিক মেডিসন বিভাগ চালু হয়েছে।জেনোম সিকোয়েন্সিং, এন্টিবডি সেন্সিটিবিটিসহ বেশকিছু গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। বাংলাদেশ ও কোরিয়া সরকারের যৌথ অর্থায়নে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। ফলে দেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে না গিয়ে কম খরচে উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়া দেশে প্রথমবারের মত ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। লিভারসহ অন্যান্য অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট কার্যক্রমও সমন্তরালভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।

সমাবর্তনে সায়মা ওয়াজেদের পাশাপাশি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রীতে ভূষিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিষ্ট অধ্যাপক ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম এবং বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডাঃ কাজী শহিদুল আলম।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্য, ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, শিক্ষকবৃন্দ, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ৩৫ জনকে ‘চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক’ প্রদান করা হয়।

Facebook Comments Box

Posted ২:১২ এএম | মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০২৩

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(173 বার পঠিত)
ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।