| সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট | 123 বার পঠিত
গতকাল এফবিসিসিআই মিলনায়তনে রমজানে পণ্যের দর স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনটির পক্ষে এমন আহ্বান জানানো হয়। এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেছেন, ভোগ্যপণ্য ফেনসিডিল বা ইয়াবার মতো অবৈধ ব্যবসা নয়। লুকোচুরির মাধ্যমে বৈধ ব্যবসাকে এভাবে অবৈধ করে মানুষের গালি খাওয়া যাবে না।
এফবিসিসিআই সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় মিল মালিক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা এবং টিসিবি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ক্যাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি অংশ নেন। সরবরাহকারী আদেশ বা ডিও প্রথার কারণে বারবার হাতবদলে দর বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক্ক কাঠামোতে পরিবর্তন, বিদ্যুৎ-গ্যাস ও ডলার সংকটের সমাধান এবং বিভিন্ন পর্যায় থেকে অভিযানের নামে হয়রানি বন্ধ করার অনুরোধ জানানো হয়।
সরকার নির্ধারিত দরে ভোজ্যতেল ও চিনি বিক্রি করতে না পারার কারণ জানিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁদের এর চেয়ে বেশিতে কিনতে হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা রসিদে প্রকৃত মূল্য উল্লেখ করেন না। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, মিল থেকে বেশি দরে কেনার কারণে তাঁদের কিছু করার থাকে না। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে। নাটক-সিনেমা বাদ দিয়ে সবাইকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করতে হবে।
মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট ও নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধি বলেন, সরকার এখন খোলা চিনির দর ১০৭ টাকা বেঁধে দিয়েছে। অথচ পাইকারি পর্যায়ে তাঁদের কিনতে হচ্ছে ১০৮ টাকা ২০ পয়সা দরে। তাঁদের পাকা রসিদ দেওয়া হয় না। রসিদ দিলেও শুধু পণ্যের নাম লিখে দরের ঘর খালি রাখা হয়। অনেক সময় যে দর লেখা হয়, নেওয়া হয় তার চেয়ে বেশি। দিনাজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চুয়াডাঙ্গা চেম্বারের প্রতিনিধিও প্রকৃত দর ও রসিদের দরের ভিন্নতা নিয়ে বক্তব্য দেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি এ বক্তব্যের সত্যতা জানতে চান ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পাইকারি ব্যবসায়ী গোলাম মাওলার কাছে। তিনি এর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ভালো-খারাপ যাই হোক, পণ্যের জন্য আমাদের মিলে যেতে হয়। তাঁরা রসিদে দেন এক দর, টাকা নেন আরেক দরে।
সভায় সিটি, মেঘনা ও টিকে গ্রুপের প্রতিনিধি থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তখন এফবিসিসিআই সভাপতি মালিকদের সঙ্গে বসে এ সমস্যা সমাধানের জন্য আরেকটি সভা আয়োজনের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা করবেন, কাগজ দেবেন না। এটা হতে পারে না। বিভিন্ন উৎসবের সময় সারাবিশ্বে দর কমে। আমাদের এখানে প্রতিবছর রমজান ও ঈদে দর বাড়ে। অনেক সময় পণ্য উধাও হয়ে যায়। গত বছর ঈদের পর বাজারে তেলই পাওয়া যায়নি। অথচ অনেকের খাটের নিচ থেকে হাজার হাজার লিটার তেল উদ্ধার হয়েছে।’ তিনি বলেন, কেউ লোকসান করবেন না। তাই বলে এমন তো চলতে পারে না। ব্যবসায়ীদের মানুষ গালি দেন। মুনাফাখোর বলে, শুনতে খারাপ লাগে।
চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল হাসেম বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। আবুল হাসেম বলেন, সব দোষ চাপানো হয় ব্যবসায়ীদের ওপর। কিছু হলেই তাঁদের জরিমানা করা হয়। শুধু খুচরা পর্যায়ে দর ঠিক করা হয়। তা না করে মিলার, পাইকারি, খুচরা সব পর্যায়ে আলাদা আলাদা দর ঠিক করে দিতে হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি এক পর্যায়ে এবার রমজানে বেশি মুনাফা না করে নূ্যনতম পর্যায়ে রাখার প্রতিশ্রুতি চান। এ সময় দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ভোগ্যপণ্যে মূল্য ছাড়ের কোনো সুযোগ নেই। বিশ্বের কোথাও তা হয় না। তবে সহনীয় পর্যায়ে যেন থাকে সবাই মিলে সেটা দেখতে হবে।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. বসির উদ্দিন বলেন, ভারতে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৭ টাকা। আমাদের এখানে ১০৭ টাকা। অতিরিক্ত শুল্ক এবং ডলার সংকটের কারণে দরে এত পার্থক্য।
সিটি গ্রুপের করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, এলসি খোলার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকে কীভাবে ধরনা দিতে হচ্ছে, তা অনেকের জানা। এরপরও কাঙ্ক্ষিত এলসি খোলা যাচ্ছে না। এলসি খুললেও ডলারের অভাবে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। রমজানের জন্য যে পরিমাণ এলসি খোলা দরকার ডলার সংকটের কারণে তা খোলা যায়নি।
বাংলাদেশ চিনি রিফাইনারি মিল মালিক সমিতির প্রতিনিধি তসলিম শাহরিয়ার বলেন, গত চার-পাঁচ বছর ধরে চিনি সরবরাহে কোনো সংকট ছিল না। এবার গ্যাস সংকট শুরুর পর উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। নির্ধারিত মাত্রায় গ্যাসের চাপ থাকলে এ সমস্যা কেটে যাবে। তিনি বলেন, বর্তমান ডলারের দর বিবেচনায় প্রতি কেজি চিনি আমদানির খরচ পড়ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। প্রতি কেজিতে ৩৫ টাকার মতো শুল্ক দিতে হচ্ছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন পক্ষের হস্তক্ষেপে এখন আর এলসির সমস্যা থাকার কথা নয়। এরপরও বারবার আন্তর্জাতিক বাজার, ডলার সংকট ও গ্যাসের চাপ না থাকার কথা বলে রমজানে দর বাড়ানোর একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ব্যবসায় লাভ করতে হবে, তবে মানবিক দিকও বিবেচনা করতে হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে। পাকা রসিদ ছাড়া ব্যবসা করা যাবে না।
টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান পিএসসি বলেন, দর অনেক বাড়লে বাজার হস্তক্ষেপ করতে টিসিবির পণ্য বিক্রি বাড়াতে হয়। মজুত এবং আমদানি ঠিক থাকলে এর দরকার হয় না। এবার রমজানে দর বাড়বে না বলে তিনি আশা করেন।
ক্যাবের সহসভাপতি কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ব্যাংকের কর্ণধার, তাঁদের আত্মীয় কিংবা ভালো সম্পর্ক ছাড়া অন্যরা এলসি করতে পারছেন না। এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।
Posted ১২:০০ এএম | সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।