| সোমবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট | 27 বার পঠিত
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আর কেউ কুঁড়ে ঘরে বাস করে না, ভূমিহীন-গৃহহীন প্রত্যেককে সরকার বিনা মূল্যে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। আর্থিক সহায়তা দিয়ে জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগও করে দেয়া হচ্ছে।’
রাজস্ব ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের লক্ষ্যে রোববার দেশে প্রথমবারের মতো দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘সমগ্র বিশ্ব এখন অর্থনৈতিক মন্দা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়েছে। কাজেই আমাদের সেগুলির (অর্থনৈতিক মন্দা এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হার) মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যত বেশি ট্যাক্স সংগ্রহ করব, ততই এটি অতিক্রম করা সহজ এবং সম্ভব হবে।’
প্রধানমন্ত্রী করের পরিমাণ বাড়ানোর পরিবর্তে করদাতার সংখ্যা সম্প্রসারণে আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে এবং জনগণকে কর দিতে উদ্বুদ্ধ করতে সারাদেশে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘এটা শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক নয়, সারা দেশেই আমি সবাইকে বলবো, যারা কর দেয়ার সামর্থ্য রাখেন, আপনারা দয়া করে কর দেবেন। সেটা আপনাদের সেবায়ই সরকার কাজে লাগাবে।
‘যেহেতু বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, আজকে প্রতিটা জিনিসের দাম বেড়েছে। আজকে তেল, গ্যাস, গম, ভোজ্যতেল, চিনিসহ প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার তা সত্ত্বেও এগুলো অধিক মূল্যে কিনে নিয়ে আসছে। সেখানে পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে, ৮০০ ডলারের জাহাজ ভাড়া এখন ৩ হাজার ৮০০ ডলার। আমরা ভর্তুকি দিয়ে অধিক মূল্যে কিনে এনে তা কমমূল্যে দেশের মানুষকে দিচ্ছি। এক কোটি মানুষ টিসিবির কার্ড পেয়েছে, সেখানে ভর্তুতি মূল্যে মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষিতে সরকার ভর্তুতি দিচ্ছে, করোনাকালে ব্যবসায়ীদের শিল্প ও কলকারখানা চালু রাখার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন সরকার যেন রাষ্ট্র চালাতে পারে বা মানুষের জন্য কাজ করতে পারে সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ ভর্তুকি আমরা আর কত দিতে পারবো? তাছাড়া আমাদের উন্নয়ন কাজগুলো যেন ব্যাহত না হয় সেদিকেও দেখতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এখন আর কেউ কুঁড়ে ঘরে বাস করে না, ভূমিহীন-গৃহহীন প্রত্যেককে সরকার বিনা মূল্যে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। আর্থিক সহায়তা দিয়ে জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগও করে দেয়া হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের গত ১৪ বছরের আমলে দেশে আমূল পরিবর্তন এসেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করদানের সক্ষমতা কিন্তু আমাদের উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও রয়েছে। সেখানে আমরা যদি একটু প্রচার-প্রচারণা ভালোভাবে চালাই, তাহলে মানুষ কিন্তু স্বতস্ফূর্তভাবে আসবে, কারণ তারা তো সেবা পাচ্ছে। এই সেবাটা পাওয়ার জন্যই তারা করবে’
দেশে আয়কর প্রদানকারীর সংখ্যা এখনো অনেক কম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, অনেকে একে ঝামেলা মনে করেন।এজন্য সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এখানে কোনো জোর জুলুম খাটাবেন না। মানুষকে কোনো ভয়-ভীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলা যাবে না। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জনগণকে জানাতে হবে যে- আপনি যে কর দেন, সেটা কিন্তু আপনার কাজেই লাগে।’
‘যাদের করফাঁকি দেয়ার প্রবণতা আছে- সর্বক্ষেত্রে ডিজিটাল সিস্টেম হয়ে গেলে তারা এই ফাঁকিটা আর দিতে পারবে না। আর মানুষ যেন করফাঁকি না দেয় সেজন্য করের পরিমাণটাও এমন রাখতে হবে- যেন প্রতিটা মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে দিতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অবরোধ ও পাল্টা-অবরোধের বাস্তবতায় অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখা ও বেগবান করার জন্য অভ্যন্তরীণ উৎসই হচ্ছে রাজস্ব আহরণের প্রধান ক্ষেত্র। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় করহার না বাড়িয়ে বরং ক্ষেত্রবিশেষে করহার যৌক্তিকীকরণ করা, করভিত্তি সম্প্রসারণ এবং কর প্রদানে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এই মূল্যস্ফীতিতে করহার আমরা বাড়াতে চাই না, কিন্তু করদাতার সংখ্যা বাড়াতে চাই, সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী কাস্টমস ব্যবস্থাপনায় অনুসৃত ‘ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট প্রাকটিসেস’ বিবেচনায় নিয়ে একটি নতুন কাস্টমস আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকসহ সব তফসিলি ব্যাংক, বেপজা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ অনেক স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কাস্টমস বিভাগের কম্পিউটার সিস্টেমের ইন্টারফেসিং ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কেবল চট্টগ্রাম নয়, মোংলা ও পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন স্থলবন্দরকেও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। এর ফলে আমাদের বিরাট অংকের রাজস্ব আয় হতে পারে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম এবং সদস্য ড. আব্দুল মান্নান শিকদার। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য প্রদ্যুৎ কুমার সরকার।
অনুষ্ঠানে এনবিআরের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
Posted ১২:২৮ এএম | সোমবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।