শুক্রবার ১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

বিশ্বে চালের দাম কমছে, দেশে কেন দাম বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   114 বার পঠিত

বিশ্বে চালের দাম কমছে, দেশে কেন দাম বাড়ছে

চালের বাজার নিয়ে তিন উপদেষ্টা তিন ধরনের কথা বলেছেন। তিনজনই দেশবাসীকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন যে চালের দাম আর বাড়বে না। কিন্তু বিশ্ববাজারে চালের দাম যখন কমতির দিকে, তখন দেশের বাজার কেন উর্ধ্বমুখী, এই প্রশ্নের জবাব নেই।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় মঙ্গলবার নির্মাণাধীন সাইলো পরিদর্শন শেষে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘বিদেশ থেকে কয়েক দফা আমদানি করায় চালের দাম আর বাড়বে না। আমরা আরও চাল আনতে থাকব। তবেই দাম বাড়ার সুযোগ আর থাকবে না।’

কিন্তু তিনি সরকারি গুদামে চালের মজুদ যে ক্রমেই কমে যাচ্ছে তা বলেননি। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সরকারি গুদামে যে চাল মজুদ থাকার কথা তারচেয়ে অনেক কম আছে। এ কারণেই সরকার স্মার্ট কার্ডের বিপরীতে সাশ্রয়ী দামে অন্যান্য ভোগ্যপণ্য দিলেও চাল দিচ্ছে না।

বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি এলাকার দীপিকার মোড়ে টিসিবির পণ্য বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বর্তমানে আমনের ভরা মৌসুম চলছে। বাজারে চালের ঘাটতি নেই। ফলে চালের যে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তা অযৌক্তিক। দাম বাড়ার পেছনে সাময়িক মজুতদারি হয়েছে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যাপকভাবে আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

উপদেষ্টা স্বীকার করেছেন ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার যৌক্তিক কারণ নেই। কিন্তু এই কাজটি যাঁরা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না সরকারকে। আওয়ামী লীগ সরকার অলিগার্ক বা কোটারি গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্য মজুদদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার কেন চুপচাপ বসে আছে? কেন উপদেষ্টারা অতি মৃদু কণ্ঠে কারসাজির কথা বলছেন। অথচ সরকার একজন কারসাজিওয়ালাকেও ধরছেন না।

বাণিজ্য উপদেষ্টা  সারা দেশে ৬৩ লাখ স্মার্ট কার্ড বিতরণ করার তথ্য জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এক কোটি কার্ড বিতরণ করা হয়েছিল। সেই কার্ডে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাতিল করে নতুন স্মার্ট কার্ড দেওয়া হচ্ছে। বাকি ৩৭ লাখ কার্ড কবে দেওয়া হবে, সে কথা জানাতে পারেননি বাণিজ্য উপদেষ্টা। একটি স্মার্ট কার্ড মানে একটি পরিবারের সুরক্ষা। গত সাড়ে পাঁচ মাসে দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে, এ রকম কোনো উদাহরণ নেই।

গত ১৫ ডিসেম্বর রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‍্যাপিড) গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০২২ সালের পরের দুই বছরে ক্রমাগত উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের মানুষের ক্রয়সক্ষমতা কমেছে, এতে নতুন করে ৭৮ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমায় এসেছে, আর প্রায় ১ কোটি মানুষ দারিদ্র্যের ঝুঁকির মধ্যে এসেছে। এর মধ্যে আগে দরিদ্র ছিল-এমন মানুষের মধ্যে ৩৮ লাখ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে এসেছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ১ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ নতুন করে হয় দরিদ্র হয়েছে বা দারিদ্র্যের ঝুঁকির মধ্যে এসেছে-উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সেভাবে আয় না বাড়ার ব্যবধানের কারণে।এর আগে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। তাদের মধ্যে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের অবস্থা গুরুতর।

এ অবস্থায় দ্রুত ৩৭ লাখ কার্ড বিতরণ করা হলে অন্তত দেড় কোটি মানুষ সাশ্রয়ী দামে নিত্যপণ্যগুলো কিনতে পারতেন।

স্মার্ট কার্ডধারী গরিব মানুষের জন্য দুঃসংবাদ হলো এবার তাঁরা চাল পাবেন না। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), দুই কেজি মসুর ডাল ও এক কেজি চিনি পাবেন। গত বছর টিসিবির পণ্যের তালিকায় চাল ছিল।

সরকার একদিকে খোলা বাজারে চাল বিক্রি বন্ধ করছে, অন্যদিকে স্মার্ট কার্ডের বিপরীতে চাল দিচ্ছে না। এ অবস্থায় চালের দাম স্থিতিশীল রাখা অসম্ভব বলে মনে করেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। উপদেষ্টার ভাষ্য মতে বাজারে তো চালের এখনো প্রচুর সরবরাহ আছে। কিন্তু সেই চাল কেনার সামর্থ্য কি সবার আছে? যদি না থাকে তাহলে সরকার গরিববিরোধী নীতি কেন নিল?

স্মার্ট কার্ড নিয়ে আরও সমস্যা আছে। ঢাকাসহ বড় বড় শহরে যে লাখ লাখ গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষ রয়েছেন, তাঁদের স্থায়ী ঠিকানা নেই। স্থায়ী ঠিকানা ছাড়া তাঁরা কেউ স্মার্ট কার্ডও পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় চড়া দাম দিয়ে চাল কিনতে হবে এবং সংসারের অন্য প্রয়োজন যথা সন্তানের পড়াশোনা কিংবা রোগীর চিকিৎসার বাজেটও কাটছাঁট করতে হবে।

এই গরিব মানুষদের জন্য ট্রাকে চাল বিক্রি বড় সাশ্রয় হতে পারত। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ যেই মন্তব্য করেছেন, সেটা বাস্তবতার সঙ্গে মিল আছে বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, এসব পণ্য এত ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া হয় যে অনেক সামর্থ্যবান মানুষও এসব পণ্য কেনেন। দেশের সামর্থ্যবান মানুষ যদি ট্রাকের সামনে লাইন দিয়ে থাকেন চাল কেনার জন্য, তাহলে বুঝতে হবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কত শোচনীয়। ভ্যাট বাড়ানোর পর পণ্যের দাম তেমন বাড়েনি বলে তিনি যেই মন্তব্য করেছেন, সেটাও গরিব মানুষের সঙ্গে তামাশা বলে মনে হয়।

উপদেষ্টারা যখন চালের দাম নিয়ে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছেন, তখন প্রকৃত বাজার পরিস্থিতি উঠে এসেছে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে। না, উপদেষ্টাদের বয়ান অনুযায়ী কেবল সরু চালের দাম বাড়েনি। বেড়েছে মোটা চালের দামও। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, সরু চালের দাম গত ১ মাসে কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে, আর মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা।

উপদেষ্টাদের কাছে তিন বা পাঁচ টাকা বৃদ্ধি হয়তো কিছু্ই নয়, কিন্তু গরিব মানুষের জন্য অনেক কিছু। বাজার নিয়ন্ত্রণে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার লোকদেখানো অভিযান চালাত। অন্তর্বর্তী সরকার সেটাও বন্ধ রেখেছে, কাদের স্বার্থে?

Facebook Comments Box

Posted ১২:২৯ পিএম | বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।