নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 116 বার পঠিত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বভার গ্রহণের দিন পর্যন্ত হবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ। প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা আগের মতোই। উপদেষ্টা পরিষদে নিয়োগ পাবেন না ২৫ বছরের কম বয়সিরা। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্নও তোলা যাবে না। জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ নিতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং সংবিধান বা অন্য কোনো আইন নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে সরকার-এমন বিধান রেখে অন্তর্বর্তী সরকারকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা হয়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। শিগ্গিরই এ সংক্রান্ত আধ্যাদেশ জারি হতে পারে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
অধ্যাদেশটি জারি হলে দেশের কোনো আদালতে বৈধতার প্রশ্ন তুলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অবৈধ বা বাতিল করা যাবে না। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার দিন পর্যন্তই বর্তমান সরকারের মেয়াদ থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়ার পর অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। চূড়ান্ত হলে নিয়মানুযায়ী অধ্যাদেশ আকারে আদেশ জারি করা হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। সেখানেই তিনি অবস্থান করছেন। বিশেষ পরিস্থিতিতে ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। তবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ফলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হওয়ায় বর্তমানে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকারব্যবস্থা এবং প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টা পরিষদ বলে কিছুই নেই।
এ কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের আইনি ভিত্তি নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে, সেজন্য ১৯ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। অধ্যাদেশে বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাদের মতোই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় উপদেষ্টাদের সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া থাকলেও এখন উপদেষ্টাদের সর্বোচ্চ সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে না। আইন ও বিচার বিভাগ থেকে প্রণীত অধ্যাদেশের খসড়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদসংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, যে তারিখে প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, সেই তারিখ থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার পর নতুন প্রধানমন্ত্রী তার কার্যভার গ্রহণ করার তারিখ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার বহাল থাকবে। এর আগে সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মেয়াদ ছিল ৯০ দিন।
চূড়ান্ত খসড়া অধ্যাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ কী হবে-এসংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার একটি অস্থায়ী বা সাময়িক সরকার হিসাবে দায়িত্ব পালন করবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং সংবিধান বা অন্য কোনো আইন নিয়ে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য ও সহায়তা দেবে। আরও বলা হয়েছে, ‘সংবিধান এবং আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়া এবং নতুন সংসদ গঠিত হইবার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে তাহার পদে কার্যভার গ্রহণ করিবেন, সেই তারিখের (উভয় দিনসহ) মধ্যবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক প্রয়োগকৃত সব ক্ষমতা, প্রণীত সব অধ্যাদেশ, বিধিমালা, প্রবিধানমালা, জারীকৃত প্রজ্ঞাপন, প্রদত্ত আদেশ, কৃতকার্য, গৃহীত ব্যবস্থা আইনানুযায়ী যথাযথভাবে প্রয়োগকৃত, প্রণীত, জারীকৃত, প্রদত্ত, কৃত এবং গৃহীত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে। বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্টসহ অন্য কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষ ইহাদের বৈধতা সম্পর্কে কোনোভাবেই কোনো প্রশ্ন উত্থাপন কিংবা ইহাদেরকে অবৈধ বা বাতিল করিতে পারিবেন না।’
আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশের অধীন গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, প্রধান উপদেষ্টা বা কোনো উপদেষ্টাদের নিয়োগ নিয়ে ত্রুটি থাকলে সেজন্য কোনো কাজ অবৈধ হবে না, এজন্য কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন বা মামলা দায়েরও করা যাবে না। নতুন অধ্যাদেশের খসড়ায় রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বিদ্যমান অন্যান্য আইনে যা কিছুই বলা থাকুক না কেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে কাজ করতে হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার বৈধতার জন্য প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ নিতে হবে।
কারা উপদেষ্টা হবেন এবং তাদের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার জন্য বয়স কমপক্ষে ২৫ বছর হতে হবে। এর কম বয়সি কেউ প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পাবেন না। কোনো আদালত অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা করলে, দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেলে, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে এসব পদে নিয়োগ পাওয়া যাবে না। এছাড়া নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ড হলে এবং মুক্তি পাওয়ার পর ৫ বছর পার না হলে এসব পদে নিয়োগ পাওয়া যাবে না। এছাড়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না, এ বিষয়ে সম্মত না হলেও প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রপতির কাছে লেখা ও স্বাক্ষরযুক্ত পত্রের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টারা পদত্যাগ করতে পারবেন। পদত্যাগ, মৃত্যু বা অন্য কোনো কারণে প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে একজনকে রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ দিতে পারবেন। নতুন অধ্যাদেশের খসড়া অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর এবং উপদেষ্টারা মন্ত্রীর পদমর্যাদা, পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
Posted ৮:৪৫ এএম | শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।