শুক্রবার ১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

সঞ্চয়পত্রে আনা হলো তিন খাতে সংস্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   119 বার পঠিত

সঞ্চয়পত্রে আনা হলো তিন খাতে সংস্কার

বিদেশ থেকে ডলার সংগ্রহের লক্ষ্যে সঞ্চয়পত্রের তিন খাতে সংস্কার এনেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর মধ্যে ‘ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড’ ও ‘ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড’ কেনার ক্ষেত্রে কোনো ঊর্ধ্বসীমা থাকছে না। আগে এ দুটি বন্ডে ৫০ হাজার ডলারের বেশি বিনিয়োগ করতে পারতেন না প্রবাসীরা। এছাড়া বিদেশি মালিকানাধীন শিপিং বা এয়ারওয়েজ কোম্পানির বিদেশস্থ অফিসে কর্মরত অনাবাসিক বাংলাদেশিরা এখন থেকে নিজ নামে ‘ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড’ কিনতে পারবেন। এ সুবিধা আগে ছিল না।

একইভাবে রেমিট্যান্স দিয়ে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে সর্বোচ্চ দুবার এবং ‘ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড’ ও ‘ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড’-এ সর্বোচ্চ চারবার পুনর্বিনিয়োগের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তবে তিনটি বন্ডেই একবার করে বিনিয়োগ করা যাবে।

রোববার অর্থ বিভাগের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সেখানে বলা হয়, পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিদ্যমান তিন মাস অন্তর মুনাফার বিপরীতে প্রতিমাসে মুনাফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বিনিয়োগও হবে এখন থেকে। পহেলা ডিসেম্বর থেকে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এসব সিদ্ধান্ত দীর্ঘদিন আটকে ছিল অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (আইআরডি)। তবে উল্লিখিত সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর হলে ডলার সংকট কাটাতে সহায়তা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে জানান, ইউএস ডলার প্রিমিয়ার বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে ডলার পুনর্বিনিয়োগের সুবিধা দেওয়া হয়নি। এ আইনটি থাকা ঠিক নয়। আমি মনে করি, ডলারের যে বন্ডগুলো আছে, সেখানে পুনর্বিনিয়োগ থাকা উচিত। বন্ডে ডলার পুনরায় বিনিয়োগ সুবিধা না থাকায় গ্রাহক ইচ্ছা করলে ডলার ফেরত নিতে পারবেন। এতে ডলার চলে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। কারণ, আইনগত গ্রাহক ডলার পুনরায় বিদেশে নিয়ে যেতে পারবেন। ফলে অনেকে এ কাজটি করছে। সেটি বন্ধ করতে বন্ডে ডলার পুনরায় বিনিয়োগের বিধানটি রাখা বা সুযোগ দেওয়া উচিত।

প্রসঙ্গত, ‘সঞ্চয়পত্রে মাসিক মুনাফার বিধান আটকে দেন সচিব, সংস্কার প্রস্তাব অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ফাইলবন্দি’ শিরোনামে ১৫ অক্টোবর যুগান্তরে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ হয়। সেখানে বলা হয়, নানা ধরনের সংস্কারের প্রস্তাবটি গত বছর সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (আইআরডি) পাঠানো হয়। কিন্তু তৎকালীন আইআরডির সিনিয়র সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্যবিদায়ি চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম একক ক্ষমতাবলে এ প্রস্তাব আটকে দেন। ক্ষমতায় থাকার শেষদিন পর্যন্ত তিনি সঞ্চয়পত্র খাতে নানা সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে দেননি।

যুগান্তরে ওই রিপোর্ট প্রকাশের দিনই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অভ্যন্তীরণ সম্পদ বিভাগের নতুন সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান। সেখানে সঞ্চয়পত্র খাতে দীর্ঘদিন আটকে থাকা সংস্কারগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। ওই বৈঠক শেষে আব্দুর রহমান খান সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এতদিন পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীরা তিন মাস অন্তর মুনাফার টাকা পেতেন। এখন থেকে প্রতিমাসে তাদের মুনাফার অর্থ দেওয়া হবে। এছাড়া বাংলাদেশি মেরিনার, পাইলট ও কেবিন ক্রুরা এতদিন ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ পেতেন না। সভায় তাদের এই বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে রোববার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এখন থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র, ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে যে টাকা বিনিয়োগ করা হবে, শুধু সে টাকাই মেয়াদ শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বিনিয়োগ হবে।

তবে ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক মেয়াদি হিসাবের ক্ষেত্রে মুনাফাসহ মূল টাকা পুনরায় বিনিয়োগ করা যাবে। আর জাতীয় সঞ্চয় স্কিমে স্বয়ংক্রিয় পুনর্বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পুনরায় বিনিয়োগের তারিখ থেকে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা প্রযোজ্য হবে।

সেখানে আরও বলা হয়, ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগ এবং পুনর্বিনিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কেউ পুনরায় বিনিয়োগ করতে চাইলে সেক্ষেত্রে নতুন করে রেমিট্যান্স এনে সম্পূর্ণ নতুনভাবে বিনিয়োগ করতে হবে।

এদিকে বিদেশি মালিকানাধীন শিপিং বা এয়ারওয়েজ কোম্পানির বিদেশস্থ অফিসে চাকরির অনিবাসিক বাংলাদেশি মেরিনার, পাইলট ও ক্রেবিন ক্রুদের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগর নতুন সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আগে ডলার দিয়ে এসব অনাবাসিক পেশাজীবী সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারতেন না। এখন থেকে উল্লিখিতরা নিজ নামে বাংলাদেশের কোনো তফশিল ব্যাংকের অথরাইজড ডিলার (এডি) শাখায় বৈদেশিক মুদ্রায় (এফসি) হিসাব থাকলে ওই হিসাবে প্রাপ্ত রেমিট্যান্স দ্বারা ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, সঞ্চয়পত্র খাতে প্রস্তাবগুলো ইতিবাচক দৃষ্টিতে বিবেচনা করা হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের অর্থনীতি, সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন প্রাপ্যতা, সঞ্চয়পত্র ক্রেতার সংখ্যা-সবই বেড়েছে। কিন্তু এ খাতের বিধিবিধান নিয়মগুলো পরিবর্তন করা হয়নি, যদিও অনেক আগের প্রণয়ন করা। এখন যুগোপযোগী করা হচ্ছে।

পেনশন সঞ্চয়পত্রের মাসিক মুনাফা সুবিধার পাশাপাশি এর সিলিং পুনর্বিচেনা করা দরকার বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ, পেনশন সঞ্চয়পত্র কেনার সিলিং যখন নির্ধারণ করা হয়, ওই সময় সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতার অঙ্ক কম ছিল। এরপর ২০০৯ ও ২০১৫ সালে চাকরিজীবীদের দুটি পে-স্কেল দিয়েছে সরকার। এখন একজন দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা অবসরে গেলে আনুতোষিক ৫০ লাখ টাকার ওপরে পাচ্ছেন। এর সঙ্গে ভবিষ্যতহবিল যোগ করলে তা এক কোটি টাকার বেশি হচ্ছে। কিন্তু পেনশন সঞ্চয়পত্র কেনার সিলিং কম থাকায় অবসরে যাওয়া চাকরিজীবীরা পেনশনের পুরো টাকা দিয়ে ইচ্ছা থাকলেও এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছেন না।

এছাড়া একজন চাকরিজীবী অবসরে গেলে তার বেতন ৬৫ শতাংশ কমে যায়। যিনি ৩০ হাজার টাকা বেতন পেয়েছেন, পেনশনে গেলে পরের মাস থেকে পাবেন ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। তার ঘাটতি মেটানোর কোনো সুযোগ থাকে না। অথচ এ সময়ে তার খরচও কমছে না। যদিও বিনিয়োগের জন্য শেয়ারবাজার বা ব্যাংক আছে। কিন্তু পুঁজিবাজারের ঝুঁকি নিয়ে অনেকে বিনিয়োগ করতে সাহস পান না। ব্যাংকে আমানতের সুদ কম থাকায় সেখানেও বিনিয়োগ করেন না। আয়ের ঘাটতি মেটাতে পেনশনের টাকা দিয়ে একমাত্র সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন বেশি। কারণ, এ খাতটিকে তারা নিরাপদ মনে করেন।

উল্লেখ্য, বর্তমান পেনশন সঞ্চয়পত্র একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ (পঞ্চাশ) লাখ টাকা পর্যন্ত কেনা যায়। তবে সে অর্থের পরিমাণ আনুতোষিক ও সর্বশেষ ভবিষ্যতহবিলের তুলনায় প্রাপ্ত অর্থের বেশি নয়।

Facebook Comments Box

Posted ৮:১৯ এএম | সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।