শনিবার ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

কেন থামছে না মাজারে হামলা, কারা এর পেছনে?

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   106 বার পঠিত

কেন থামছে না মাজারে হামলা, কারা এর পেছনে?

বাংলাদেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মাজারে হামলা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। পুলিশ সদর দপ্তর এ নিয়ে সারা দেশের থানাগুলোকে সতর্ক করে দিলেও কত মাজারে হামলা হয়েছে তার কোনো সঠিক কোনো হিসাব নেই তাদের কাছে। তবে মাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন ছোট বড় মিলিয়ে ৫০টির বেশি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকেও শনিবার এক বিবৃতিতে এইসব হামলার ব্যাপারে উদ্বেগ নিন্দা জানিয়ে দায়ীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তুমূলক শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

বিববৃতিতে কয়েক দিন ধরে মাজারে হামলা করার কথাও বলা হয়েছে। তবে এইসব হামলার ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়েছে কী না সেই খবর দিতে পারেনি পুলিশ সদর দপ্তর।

গত ৫ সেপ্টেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জের দেওয়াবাগ দরবার শরিফে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়। তারপর থেকে দেশের আরও কিছু মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। কোনো কোনো মাজারে গান বাজনাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকার গাজীপুরে একটি মাজার বুলডেজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। মাজারগুলোতে ভক্তদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায়ও নেমেছেন।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের ইয়াজোড়া দরবার শরিফের প্রধান খাদেম সৈয়দ গোলাম মঈন উদ্দিন ভান্ডারি বলেন, গত ৯ সেপ্টেম্বর ওই দবার শরিফে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। হামলার পর মাজারটি পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের এলাকায় আরও সাত-আটটি মাজারে হামলা হয়েছে। সারা দেশ কমপক্ষে ৫০টি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই হামলায় যারা অংশ নিয়েছে তারা কওমি মাদ্রাসার ছাত্র। স্থানীয় কয়েকটি মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের একটি স্বার্থান্বেষী মহল ব্যবহার করেছে।

তার কথা, এখানে চিন্তার ভিন্নতা আছে। সেটা থাকতেই পারে। ওহাবি ভাবধারার আমরা অনুসারী না। আমরা সুফিবাদে বিশ্বাসী। তাই বলে আমাদের ওপর হামলা হবে?

সারা দেশে তিন হাজারেরও বেশি মাজার আছে। সব মাজারের ভক্তরাই এখন উদ্বিগ্ন। এইরকম পরিস্থিতি আগে কখনো হয়নি বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, হামলার পর পুলিশ এসে কী হবে। আমরা হামলার আগেই নিরাপত্তা চাই।

গোলাপ শাহ মাজারের খাদেম হাজি মো. জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, বাংলাদেশে পির ওলির হাত ধরেই ইসলাম এসেছে। বাংলাদেশে ৩৬০ জন ওলি আউলিয়ার আগমন হয়েছে। তাদের হাত ধরে আরও অনেক অলির জন্ম এখানে। এখন একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠী তাদের মাজার ও দরবারের ওপর হামলা চালাচ্ছে। আমরা শান্তি প্রিয় মানুষ, শান্তি প্রিয় ভক্ত। গোলাপশাহ মাজারে হামলার হুমকি পাওয়ার পর আমরা ভক্তরা গত কয়েক দিন ধরে মাজার পাহারা দিচ্ছি। আমরা আমাদের বুক দিয়ে মাজার রক্ষা করব।

তিনি আরও বলেন, মুসলামনের দায়িত্ব এখন এইসব মাজার রক্ষায় এগিয়ে যাওয়া। আর আমরা ধৈর্য ধারণ করছি। আল্লাহর কাছে বিচার দিচ্ছি। রাষ্ট্র কী করবে সেটা রাষ্ট্রের বিষয়।  গত ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি মাজারে হামলা হয়েছে। যারা এ হামলা করছেন তাদের বিশেষ উদ্দেশ্য আছে বলে মনে হয়। এই জনপদে অনেক ওলি আউলিয়ার মাজার আছে। তারা এখানে ইসলাম প্রচারে ভূমিকা রেখেছেন। যারা ইসলামের নামে মাজারে হামলা করছেন তারা আসলে ইসলামকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছেন।

সিলেটের হজরত শাহ পরাণ (র.) মাজারের খাদেম ফিরোজ মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, গত ৯ সেপ্টেম্বর রাত তিনটার দিকে ওরশ চলাকালে মাজারে হামলা করা হয়। তারা মাজারে ভাঙচুর করে। সিসি কামেরা ভাঙচুর এবং খুলে নিয়ে যায়। ভক্তদের (পাগল) মারপিট করে।

হামলার সময় হামলাকারীরা বলে মাজারে গান বাজনা করা যাবে না, গাজা খাওয়া যাবে না, বলেন তিনি।

হামলার সময়ও সেখানে পুলিশ ছিল এবং তাদের উপস্থিতিতেই এইসব ঘটনা ঘটে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা মামলা করেছি। মাজারে আরও পুলিশ দেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের কষ্ট হলো এ প্রথম মাজারে হামলা হলো। ভক্তদের মারপিট করা হলো।

তবে সিলেটের আরেকটি মাজার হজরত শাহাজালাল (র.) মাজারে এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক থাকলেও এখনো হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। সেখানেও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে ঢাকার ত্বাকওয়া মসজিদের ইমাম মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের হামলা ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না। কোনো অভিযোগ থাকলে তা প্রশানের কাছে জানানো যায়। কিন্তু হামলা করা বেআইনি।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, যারা হামলা করছে তারা উগ্রবাদী। তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। আর যাতে হামলা না হয় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ হামলা যদি বন্ধ না হয় তার দায় শেষ পর্যন্ত এ সরকারকেই নিতে হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মিডিয়া ইনামুল হক সাগর জানান, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে কয়েকদিন আগেই এ হামলা যাতে না হয় সে ব্যাপারে পুলিশকে কঠোর অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। যারা হামলা করেছে তাদের অবশ্যই চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে সারা দেশে মাজারে মোট কতটি হামলা হয়েছে। কতটি মামলা ও কতজনকে আটক করা হয়েছে সেই তথ্য তিনি জানাতে পারেননি।

 

Facebook Comments Box

Posted ৭:১৬ এএম | রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।