শনিবার ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

বিশ্ববিদ্যালয় পুনর্গঠনে অগ্রাধিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   104 বার পঠিত

বিশ্ববিদ্যালয় পুনর্গঠনে অগ্রাধিকার

স্মরণ করি জুলাই, ২০২৪ গণঅভ্যুত্থানের শহীদ বীর সন্তানদের। একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে গুণগত শিক্ষা, গুণগত গবেষণা ও মানসম্পন্ন অবকাঠামো তৈরির বিকল্প নেই। পাশাপাশি গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও সর্বাধুনিক লাইব্রেরি থাকাটাও জরুরি। ভাইস চ্যান্সেলর পদটি হচ্ছে একজন শিক্ষকের সর্বোচ্চ সম্মানের জায়গা, সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। অথচ দুর্ভাগ্য, মানসম্পন্ন লিডারশিপের অভাবে বিগত বছরগুলোতে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ও গবেষণার গুণগত মান কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছায়নি। আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্বদানের দায়িত্ব নিয়ে একজন শিক্ষকের এমন দৃশ্যমান উন্নয়ন করা উচিত, যা ছাত্র, শিক্ষক, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, দেশ এবং জাতি সারা জীবন ধরে মনে রাখে।

শিক্ষকতা অন্য আট-দশটি পেশার মতো সাধারণ কোনো পেশা নয়। মহান দায়িত্ব ও মানবিক দায়বদ্ধতার কেন্দ্রে রয়েছে এ পেশা। দায়বদ্ধতার প্রধান বিষয়টি হলো শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা এবং যে কোনো মূল্যে নিরাপত্তার বিষয়টি সবার আগে গুরুত্ব দেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়কে জনআকাঙ্ক্ষার আশ্রয়স্থল, শিক্ষার্থীবান্ধব ও গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলাই একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের মৌলিক কাজ। মানসম্মত গবেষণা আর উচ্চমানের শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার প্রকৃত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিষ্ঠাবান শিক্ষকের আন্তরিক প্রচেষ্টা সর্বাপেক্ষা জরুরি। সর্বোপরি, দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে একটি সর্বজনীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করাই প্রকৃত শিক্ষকের মূলনীতি।

আমার পরিকল্পনায় এমন কতক বিষয় রয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে প্রকৃত ভূমিকা রাখতে পারবে বলে গভীরভাবে বিশ্বাস করি। নিম্নে তা উল্লেখ করছি :

সময়ের অপচয় কমানো: বছরের এক থেকে দুই মাস পরীক্ষার মৌসুম নির্ধারণ করে সব প্রোগ্রামের পরীক্ষা সম্পন্ন করা যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন সময়ের অপচয় কমবে, অন্যদিকে বছরের বাকি মাসগুলোতে শিক্ষকবৃন্দ একাডেমিক ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের লক্ষ্যে লেখাপড়া-গবেষণায় মনোযোগী হতে পারবেন।

পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস: প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে শিক্ষা এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়। সব প্রোগ্রাম প্লাস্টিকমুক্ত হতে পারে। সুবিধাজনক সব জায়গায় ফিল্টার পানি এবং গ্লাস থাকবে। বিভিন্ন দিবসে কার্ড না ছেপে ডিজিটাল শুভেচ্ছা জানানো যায়।

শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস: মূল ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত একাডেমিক বিল্ডিং, আবাসিক হল প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা বিশেষ জরুরি। পরীক্ষাসংক্রান্ত সব ধরনের জটিলতা নিরসনের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা অর্থাৎ দিনের কাজ দিনে সম্পন্ন করার মতো পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়: উচ্চমানের গবেষণা সম্পন্ন করার জন্য অতি সমৃদ্ধ একটি ল্যাবরেটরি তৈরি করা উচিত। ল্যাবরেটরির জন্য ডেডিকেটেড গবেষক, ল্যাব টেকনিশিয়ান ও ডেমনস্ট্রেটর নিয়োগ দেওয়া উচিত।

আইডেন্টিটি ক্রাইসিস নিরসন: সব একাডেমিক প্রোগ্রামের কোয়ালিটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার করা, ক্লাসে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা, প্রজেক্ট বেইজড লার্নিং এবং মিডটার্ম পরীক্ষা চালু করার বিকল্প নেই।

প্রোগ্রাম ইকুইভ্যালেন্সি: বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক প্রোগ্রাম রয়েছে, যেগুলোর ইকুইভ্যালেন্সি নিয়ে জটিলতা আছে। এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি দিয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সমস্যা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণেও জটিলতা দেখা দেয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ইকুইভ্যালেন্সি নিশ্চিত করতে হবে।

ফাইলের দীর্ঘসূত্রতা: পরীক্ষার বিলসংক্রান্ত ঝামেলা থেকে শুরু করে অফিসের সব ধরনের ফাইলের দীর্ঘসূত্রতা দূর করা একান্ত আবশ্যক। ফাইলের দীর্ঘসূত্রতার জন্য অনেকেই কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। আমার মনে হয়, সর্বোচ্চ সাত কর্মদিবসের মধ্যে বিলসহ প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করার বিধান চালু করা জরুরি।

কর্মমুখী ট্রেনিং প্রোগ্রাম: জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার সঙ্গে দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা খুবই জরুরি। কাজেই দেশের বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে রূপান্তরিত করতে ছয় মাস থেকে এক বছরব্যাপী কর্মমুখী ট্রেনিং প্রোগ্রাম চালু করা প্রয়োজন। এ ছাড়া সরাসরি কর্মক্ষেত্রে শিক্ষানবিশ এবং ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীদের জন্য হাতে-কলমে শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা জরুরি। এতে জাতীয় পর্যায়ে উন্নয়নের সূচক নিশ্চিতভাবেই ঊর্ধ্বগতি লাভ করবে।

স্টেম এডুকেশন: চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এবং ২১ শতকের জন্য জনবল গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতে (STEM) শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া উচিত। স্টেম এডুকেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জটিল সমস্যা সমাধানের মনোভাব ও দক্ষতা তৈরি হবে।

বৈষম্য দূর করা: জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর সফলতা আসবে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের মাধ্যমে। কাজেই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সব ধরনের বৈষম্য দূর করা অত্যন্ত জরুরি। ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, দলীয় মনোভাবের বিরূপ প্রকাশ, নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ-পদোন্নতি অথবা প্রভাব খাটিয়ে পদোন্নতিতে বাধা ইত্যাদি সব বাজে তৎপরতা চিরতরে বন্ধ হোক, এমনটাই প্রত্যাশা করি।

জাতীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে জাতিকে ঠকানো কখনোই কারও কাম্য হতে পারে না। মাতৃভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসা, শিক্ষা ও গবেষণার প্রকৃত উন্নয়ন এবং জ্ঞানজগতের সুষ্ঠু বিকাশে নীতি আদর্শের শিক্ষক হিসেবে আমার শিক্ষকতা জীবনের বাকি সময়টায় উন্নত এক বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণে আমার সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখতে চাই। চলুন, সবাই মিলে সুন্দর এক ভবিষ্যৎ ভাগাভাগি করে নিই।

Facebook Comments Box

Posted ৮:৫৬ এএম | বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।