শনিবার ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

তোতা পাখি ও মুক্তির পথা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   106 বার পঠিত

তোতা পাখি ও মুক্তির পথা

অবাংলাদেশর আন্দোলন এবং ছাত্র সমাজের ভূমিকা ওপার বাংলায় যে প্রভাব ফেলবে এটা অনুমান করা কঠিন কিছু নয়। এক ভাষা এক চেহারার মানুষ আমরা। তবে তাদের শক্তির কথা জানি না কিন্তু সাহস আমাদের চাইতে কম বলেই মনে হয়। এর কারণ এমন ও হতে পারে গণতান্ত্রিক দেশে-সমাজে বসবাসর কারণে তাদের আচার আচরণ গণতান্ত্রিক হয়ে গেছে। এটা মানতে হবে কলকাতা তথা বা পশ্চিমবাংলায় ঘুষ-দুর্নীতি অপশাসন কম কিছু না হলেও আমাদের মতো হাজার হাজার কোটির গল্প নেই: যা আছে তা হাতে গোণা।

বলছিলাম এবার গত দুদিন থেকে মহাবিপাকে আছেন মমতা ও তার দল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল যে এত তাড়াতাড়ি এমন একটা বিপদে পড়তে পারে এটা কল্পনা করা যায়নি। মমতা ব্যানার্জীর মূল শত্রু তার মুখ। এপারে বাংলাদেশে আমাদের জন তো ধরাকে সরা জ্ঞান করতেন। তাকে মাননীয় থেকে মাতা, মাতা থেকে দেবীতে পরিণত করা হয়েছিল। রীতিমতন ঘটা করে কওমের জননী উপাধি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। শেষটায় এমন মনে হতো কোনকালেও তার বিরুদ্ধে ন্যায্য কথা বলা যাবে না। সবচেয়ে মজার ছিল স্তাবকদের তোষামোদী আর তৈলাক্ত সব প্রশ্নের নামে পায়ে পড়া। মমতার বেলায় এমন কিছু দেখিনি। কারণ তিনি নিজেই এক মহাচরিত্র। গান গাইছেন ভুল সুরে ভুল কথায়, ইচ্ছেমতো রবীন্দ্রনাথের গানের কথা বদলে দিচ্ছেন। কবিতার নামে কৌতুক করছেন ভরা মজলিশে। এপাং ওপাং ঝপাং নামে তার কবিতা ঘিরে সেখানকার বুদ্ধিজীবীদের উল্লাস দেখে মনে হয় বাংলার সর্বনাশের আর কিছু বাকি নেই।

তবে মমতার বড় সাহস জনগণের ভোট। মমতার দল বিনা ভোটে, রাতের ভোটে জিতে আসেনি। ছোটখাটো ঘটনা বাদে তার দল জিতেছে জনগণের ভোটে। যখন সেটা হয় তখন শাসকের পা থাকে মাটিতে। মমতা বিদ্রোহ দমনে পুলিশকে ব্যবহার করেছে এটা যেমন ঠিক তেমনি পুলিশ ও তার ভাষায় লাশ তুলে দেয়নি। লাশ ফেলেনি বলেই আন্দোলন আরো ব্যাপক রূপ নিতে পারেনি এখনো। এই আন্দোলন কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা এখনই বলা মুশকিল।

এটা ঠিক যে, কলকাতার মানুষজনও পথ চিনে গেছে। তাদের এমন সহিংস ভয়াবহ রূপ আমি আগে দেখিনি। বাম সরকারের সময় অল্প ঘটনাতেই সরকারের গদি টলে গিয়েছিল। দীঘর্কালের বাম শাসন ঝরে গিয়েছিল চোখের পলকে। সেখানে পট পরিবর্তন ঘটে ভোটে। এবার কি হবে না হবে তার উত্তর দেবে সময়। আপাতত আমরা দেখছি অস্থির এক পশ্চিমবাংলা। এই অস্থিরতা যে প্রভাব ফেলছে তার দায় মেটাতে হবে। কারণ গণরোষ কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। মমতাকে ও ছেড়ে কথা বলবে বলে মনে হয় না। কিন্তু সমাজে যে কুপ্রভাব তার সঙ্গে অনেক কিছু মিলে যাচ্ছে। আমরা বড় দুর্ভাগা জাতি। আমাদের কপালে গণতন্ত্র জোটেনি। পাকিস্তান আমলে সেনা শাসকদের ডান্ডা এরপর স্বাধীনতা। আমরা ভেবেছিলাম স্বাধীন দেশে আমরা সবাই মিলেমিশে থাকব। এমন সমাজে কে কাকে মারবে? কিন্তু তা সত্য হলো না। স্বাধীনতার পরপরই হত্যা করা হয়েছিল মতিউর ও পরাগকে। ছাত্র ইউনিয়নের এই দুজন কর্মী স্বাধীন বাংলার প্রথম শহীদ। আমেরিকান দূতাবাসে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী এ দুই ছাত্র স্বাধীন দেশের প্রথম সরকারের কলঙ্ক। এরপর আমরা পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ড দেখেছি। একের পর এক মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার মাধ্যমে দেশকে মুক্তিযোদ্ধাবিহীন করার চক্রান্ত দেখেছি। এত রক্ত ত্যাগের পর ও দেশে গণতন্ত্র জায়গা করতে পারেনি। মাঝে মধ্যে একটু আশার ঝলক দেখা গেলেও মূলত সবসময়ই কোন না কোনোভাবে একনায়কতন্ত্র এসে ভর করছে, যার চূড়ান্ত রূপ জাতি দেখেছিল গত এক দশকে। কথা বলা ভাবনা এমনকি মনে মনে ভাবাটাও যেন বন্ধ হবার পথে ছিল। অন্য কিছুকে সমালোচনা করতে হলেও বলতে হতো তিনি বিতর্কের উর্ধ্বে।

আমরা সৈয়দ মুজতবা আলীর গল্পে পড়েছিলাম, একটি তোতা পাখিকে ভারত থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন এক আরব সওদাগর। তোতাটিকে খুব ভালোবাসতেন মনিব। সোনার খাঁচায় রেখে তাকে দামি-দামি খাবার খাওয়াতেন। কিন্তু তোতার মন ভরত না। সে চাইত নীল আকাশে ঘুরে বেড়াতে। তার সতীর্থ তোতাদের সঙ্গে উড়তে। এমনই এক সময় সওদাগর ঠিক করলেন তিনি বাণিজ্যে যাবেন। আবারও ভারতে যাবেন তিনি। যাবার আগে সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন কার জন্য কি আনবেন? একদিন তোতা পাখিটিকেও জিজ্ঞেস করলেন তার কি চাই? তোতাটি মনিবকে অবাক করে দিয়ে বলেছিল, হুজুর সে দেশে যদি আমার কোনো বন্ধু বা যে কোন তোতার সঙ্গে দেখাহয় দয়া করে জেনে আসবেন আমার মুক্তির পথ কি? সওদাগর মনে মনে রাগ করলেও মুখে বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে ।

বেশ কিছু মাস পর বাণিজ্য শেষে বাড়ি ফিরলেন সওদাগর। দাস-দাসী আত্মীয়স্বজনদের যার যার জিনিস বুঝিয়ে দিলেও তোতার ঘরে ঢোকেন না। একদিন কি কারণে যেন ভুল করে ঢুকে পড়তেই তোতাটি সালাম দিয়ে বলে উঠল, হুজুর সবার মুখে কত গল্প শুনি। সওদাগর বললেন, আমি ভারতের এক জঙ্গলে তোমার সতীর্থ পাখিদের দেখা পেয়েছিলাম। তাদের কাছে তোমার মুক্তির কথা জানতে চাওয়ায় সেখান থেকে একটি তোতা মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে মরে যায়। তাই আমি তোমাকে কিছু বলিনি। এ কথা শেষ হবার পরপরই ঝুপ করে একটা শব্দ হলো। হতচকিত সওদাগর পেছন ফিরে দেখে খাঁচার তোতাটিও মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। মরেই গেছে হয়তো। দুঃখ পেলেও তিনি খাঁচাটির দুয়ার খুলে তোতাকে বাইরে ফেলে দেয়ার আগেই সে ডানা মেলে উড়াল দিল। নাগালের বাইরে গিয়ে বলল, হুজুর ওই যে তোতাটি আপনার কথা শুনে পড়ে গিয়েছিল সে মরেনি। সে আমাকে মুক্তির পথ বাতলে গিয়েছে। তার কারণেই আজ আমি মুক্ত– বলেই আকাশে উড়াল দিল তোতা।

এটাই স্বাধীনতা। যুগে যুগে কালে কালে বিদ্রোহ বা আন্দোলনে যারা প্রাণ দেন, তারা মরেন না, তারা বাকিদের মুক্তির পথ দেখিয়ে যান। সেটা আমাদের দেশে হোক আর পশ্চিমবঙ্গেই হোক, মুক্তি, গণতন্ত্র আর স্বাধীনতার তোতা পাখি কখনো চিরকাল শেকলবন্দি খাঁচায় থাকে না। এটাই সত্য।

Facebook Comments Box

Posted ১২:২৮ পিএম | বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।