শুক্রবার ১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

৩০ টাকার সবজি হাতবদল হয়ে ভোক্তার ঘরে পৌঁছায় ১৫০ টাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   114 বার পঠিত

৩০ টাকার সবজি হাতবদল হয়ে ভোক্তার ঘরে পৌঁছায় ১৫০ টাকায়

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও বাজারে পণ্যমূল্য পরিস্থিতি সর্বকালের রেকর্ড ছাড়াচ্ছে। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে সব পণ্যের দামই বাড়ছে হুহু করে। তাদের থাবা থেকে বাদ যায়নি সবজিও। রাজধানীর খুচরা বাজারে বেশির ভাগ সবজির কেজি ১০০ টাকার ওপরে। আবার কিছু ৩০০ টাকাও ছাড়িয়ে গেছে। পরিস্থিতি এমন-চার থেকে পাঁচ হাত বদলে কৃষকের ৩০ টাকা কেজির সবজি ভোক্তা ১৫০ টাকা দিয়ে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যান্য সবজিতেও একই চিত্র। আর এই হাতবদলের মারপ্যাঁচে প্রথমেই সবজির দাম আকাশছোঁয়া করছেন স্থানীয় ব্যাপারী ও রাজধানীর ফড়িয়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। মূলত তাদের কারসাজিতে মাঠ পর্যায়ে কৃষক যে দামে পণ্য বিক্রি করছেন, ঢাকায় ক্রেতা পাঁচগুণ বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম কমায় পরিবহণ ভাড়াও কমেছে। সঙ্গে রাস্তায় নামে-বেনামে কমেছে চাঁদাবাজি। নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উৎপাত। তারপরও পণ্যের দাম কমেনি। বরং প্রতিদিনই বাড়ছে। যুগান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উৎপাদনকারী থেকে পণ্য ভোক্তা পর্যায়ে আসতে বেশ কয়েকটি ধাপ পেরোতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে-স্থানীয় ব্যবসায়ী, ব্যাপারী, ফড়িয়া, পাইকারি ব্যবসায়ী, খুচরা বাজার ইত্যাদি। প্রতিটি ধাপেই মূল্য বাড়ছে। সবকিছু যোগ করে নির্ধারণ হচ্ছে সবজির দাম। এর সঙ্গে লাভ যোগ করে খুচরা বিক্রেতা ভোক্তার হাতে পণ্য তুলে দিচ্ছেন। তবে ভোক্তা যে দামে কিনছেন তার সঙ্গে কৃষকের বিক্রি দামের মধ্যে বিস্তর ফারাক দেখা গেছে। বাস্তবে দুই প্রান্তের (ঢাকা ও তৃণমূল পর্যায়) সঙ্গে মিলিয়ে দেখা গেছে পণ্য উৎপাদনের পর বিক্রি করে ঠকছেন কৃষক এবং ঢাকায় খুচরা পর্যায়ে চড়া দামে কিনতে গিয়ে ঠকছেন ভোক্ত। আর বাকি সবাই লাভবান হচ্ছেন।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় রংপুর, ময়মনসিংহ ও মানিকগঞ্জের স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রতিদিনই কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে আসেন। রোববার এসব স্থানের কৃষকের কাছ থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিকেজি বরবটি ৩০-৩৫ টাকা, বেগুন ২৮-৩০ টাকা, করলা ৩০-৩৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৩০ টাকা, প্রতিপিস লাউ ২০-২৫ টাকা, প্রতিকেজি পটোল ২৫-৩০ টাকা, পেঁপে ১৫-১৮ টাকা, ঝিঙ্গা ৩৫-৩৮ টাকা ও ঢেঁড়স ৪০-৪৫ টাকায় কিনে নেয়। ঢাকার কাওরান বাজারের এই স্থানীয় ব্যবসায়ীর ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে সবজি বিক্রি করে। সেখানে প্রতিকেজি বরবটি ৫৫-৬০ টাকা, বেগুন ৪৫ টাকা, করলা ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০-৪৫ টাকা, প্রতিপিস লাউ ৪০-৬০ টাকা, প্রতিকেজি পটোল ৪২ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, ঝিঙ্গা ৫০ টাকা ও ঢেঁড়স ৬০ টাকা বিক্রি করে। পরে এই ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা আবার পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতিকেজি বরবটি ৮৫-৯০ টাকা, বেগুন ৭৫-৮০ টাকা, করলা ৬০-৬৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০-৫৫ টাকা, প্রতিপিস লাউ ৭০-৭৫ টাকা, প্রতিকেজি পটোল ৬০ টাকা, পেঁপে ৩৮-৪০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬৫-৭০ টাকা ও ঢেঁড়স ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি করে। এভাবেই দুই হাত বদলেই আকাশছোঁয়া হয়েছে সবজির দাম।

এখানেই শেষ নয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা আবার এই সবজি কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা এমনকি ৩০ টাকা লাভে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে। খুচরা বিক্রেতারা প্রতিকেজি বরবটি ১২০-১৩০ টাকা, বেগুন সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা, করলা ৮০-৯০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০-৭৫ টাকা, প্রতিপিস লাউ ১০০-১১০ টাকা, প্রতিকেজি পটোল ৮৫-৯০ টাকা, পেঁপে ৫০-৭০ টাকা, ঝিঙ্গা ৯০ টাকা ও ঢেঁড়স ৮০-৯০ টাকায় ভোক্তাসাধারণের কাছে বিক্রি করে।

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মাঠে কৃষক আর বাজারে ভোক্তা উভয়েই ঠকছেন। বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় মধ্যস্বত্বভোগীরা অতি মুনাফা লুটছে। যদি কৃষক পর্যায় থেকে সরাসরি পাইকারি ও খুচরা বাজারে পণ্য বিক্রি করার উপায় থাকত, তবে মধ্যস্বত্বভোগীরা অতি মুনাফা করতে পারত না। ক্রেতা কম দামে পণ্য কিনতে পারত।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্স ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে দেখা যায়, কাওরান বাজারে সবজির ট্রাক রাত ১২টায় আসে এবং ট্রাক থেকে ৬ থেকে ৭ বার হাতবদল হয়ে পাইকারি পর্যায়ে পৌঁছায়। সেখানে অবৈধ ফড়িয়া ব্যবসায়ী আছে প্রায় ১২০০ জন। যাদের কোনো ব্যবসায়িক লাইসেন্স, রসিদ বই এবং স্টক রেজিস্টার নেই। অভিযানে উঠে আসে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে ফড়িয়া ও আড়তদারদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এবং আড়তদারদের যোগসাজশে পাইকারি, ব্যাপারী, খুচরা ব্যবসায়ী সবাই মিলে একযোগে দাম বাড়ায়।

রংপুরের মিঠাপুকুরের লতিফপুর বউবাজার এলাকার কৃষক মজনু মন্ডল জানান, দুই বিঘা জমিতে তিনি বেগুন, ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করেছেন। জমি তৈরি, বীজ, সার, কীটনাশকের জন্য বিঘাপ্রতি প্রায় ২৫ হাজার টাকার বেশি তার খরচ হয়েছে। যে দামে সবজি বিক্রি করি তাতে লাভ তেমন হয় না। তবে কৃষকের কাছ থেকে কম দামে সবজি কিনে ব্যাপারীরা চড়া দামে বিক্রি করছেন। সেই সবজি হাতবদল হয়ে ক্রেতারা অনেক টাকা দিয়ে কিনে খাচ্ছেন। তাই মাঠ থেকেই ঢাকার পাইকারি বাজারে বিক্রির প্রক্রিয়া চালু করা গেলে কৃষক ও ক্রেতা উভয় লাভবান হবেন।

রাজধানীর নয়াবাজারে সবজি কিনতে আসা মো. আমিনুল বলেন, এত বড় বিপ্লবের পর নতুন সরকার দায়িত্ব নিলে নিশ্চিতভাবে ধরে নিয়েছিলাম বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে। তবে ঘটেছে উলটো। প্রতিদিন দাম বাড়ছে হুহু করে। এক কেজি সবজি কিনতে ১০০ টাকার ওপরে ব্যয় করতে হচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই।

একই বাজারের খুচরা বিক্রেতা সোহাগ বলেন, আমরা বেশি দামে আনলে বেশি দামে বিক্রি করি। কম দাম পেলে খুচরা পর্যায়েও সবজির কম দাম থাকে। তবে সবজির কোনো সংকট নেই। সরবরাহও বেশি। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে অনেক বেশি দাম।

রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিশেষ টাস্কফোর্স ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযানে সবজির দাম কারা বাড়ায় তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অসাধুদের আইনের আওতায় এনে নানা ধরেনের অসংগতি দূর করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে কয়েকদিনের মধ্যে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

Facebook Comments Box

Posted ৫:৫০ এএম | মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।