| সোমবার, ২৯ মে ২০২৩ | প্রিন্ট | 53 বার পঠিত
প্রিয়নবী (স.) প্রতি সপ্তাহে দুদিন রোজা রাখতেন। সোম ও বৃহস্পতিবার। এই দুদিন রোজা রাখা উম্মতের জন্য সুন্নত ও মোস্তাহাব। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (স.) সোম ও বৃহস্পতিবার দিন রোজা রাখাকে প্রাধান্য দিতেন।’ (তিরমিজি; সহিহুত তারগিব: ১০২৭)
সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য এটি অন্যতম আমল। একদিন প্রিয়নবী (স.)-কে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি জবাবে বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা সোম ও বৃহস্পতিবার এই দুদিন প্রত্যেক মুসলমানের গুনাহ ক্ষমা করেন। কিন্তু পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারী সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-‘তাদেরকে ছেড়ে দাও, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে।’ (ইবনে মাজা: ১৭৪০; সহিহুত তারগিব: ১০২৮)
সোমবারের বিশেষ মর্যাদা হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (স.) এদিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, এদিন তাঁকে নবুওয়ত দেওয়া হয়েছিল বা কোরআন নাজিল করা হয়েছিল, এদিনে বান্দার আমলনামা আল্লাহ তাআলার কাছে পেশ করা হয়, আল্লাহ তাআলা নিজ রহমতে সোমবার দিন মুসলিম বান্দাকে ক্ষমা করেন, এ কারণে।
হজরত আবু কাতাদাহ আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.)-কে সোমবার দিন রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছিলাম এবং এই দিনেই আমাকে নবুওয়ত প্রদান করা হয়েছিল অথবা এই দিনে আমার ওপর কোরআন নাজিল করা হয়েছে।’ (মুসলিম: ১১৬২)
বৃহস্পতিবারেও নফল রোজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কেননা সোমবারের মতো এদিনও আল্লাহ তাআলার কাছে বান্দার আমল পেশ করা হয়। হাদিস অনুযায়ী, সোমবার ও বৃহস্পতিবার ‘কেরামান কাতেবিন’ অর্থাৎ সম্মানিত আমলনামা লেখক ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে বান্দার আমল পেশ করে থাকেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (স.) বলেন, ‘সোম ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর কাছে বান্দার আমল পেশ করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, রোজা থাকা অবস্থায় যেন আমার আমলনামা আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়।’ (তিরমিজি: ৭৪৭; সহিহুত তারগিব: ১০২৭)
এছাড়াও নফল রোজা জাহান্নাম থেকে রোজাদারকে দূরে সরিয়ে দেয়। রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামকে তার থেকে ১০০ বছরের দূরত্বে সরিয়ে রাখবেন। (আস সিলসিলাতুস সহিহাহ: ২৫৬৫, খণ্ড-৬)
আরও ইরশাদ হয়েছে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তার এবং জাহান্নামের মাঝে আসমান ও জমিনের দূরত্ব সমপরিমাণ খন্দক তৈরি করে দেবেন। (আস সিলসিলাতুস সহিহাহ: ৫৬৩, খণ্ড-২)
রোজা কেয়ামতের দিন বান্দার মুক্তির জন্য সুপারিশ করবে এবং সেই সুপারিশ কবুল করা হবে। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘..রোজা আল্লাহ তাআলাকে বলবে, হে আমার রব! আমি তাকে আহার এবং স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত রেখেছিলাম সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করো। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে রেখেছিলাম, এজন্য তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করো। রাসুল (স.) বলেন, তখন উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে। (আহমদ: ১৭৪, খণ্ড-২)
হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, রোজা অবস্থায় ইন্তেকাল করলে সরাসরি জান্নাত। রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, যে রোজা অবস্থায় ইন্তেকাল করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহিহ আল জামে: ৬২২৪)
সুতরাং নবী (স.)-এর অনুসরণে সওয়াবের আশায় ইচ্ছা, সামর্থ্য ও সুযোগ অনুযায়ী সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার চেষ্টা করা উত্তম বান্দার বৈশিষ্ট্য।
মোটকথা, ফরজ রোজার মাধ্যমে বান্দা তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে, ওয়াজিব রোজার মাধ্যমে নিজে চাপিয়ে নেওয়া দায়িত্ব পালন করে আর নফল রোজার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পথে এগিয়ে যায়, আল্লাহর রাসুল (স.)-এর প্রিয় আমলের অনুসরণের মাধ্যমে তাঁরও প্রিয়পাত্র হওয়ার সুযোগ লাভ করে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নফল রোজার গুরুত্ব বোঝার তাওফিক দান করুন। বেশি বেশি নফল রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Posted ১:৫১ এএম | সোমবার, ২৯ মে ২০২৩
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।