বুধবার ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

সমাজে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের যে রাজনৈতিক প্রভাব

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   131 বার পঠিত

সমাজে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের যে রাজনৈতিক প্রভাব

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাব বাড়ছে। কেবল দেশের ভেতর নয়, বাইরে থেকেও ইনফ্লুয়েন্সাররা জনমতকে প্রভাবিত করছেন। তাঁরা প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমের সমান্তরালে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন—অনেকেই এমনটা ধারণা করছেন।

তবে এসব ইনফ্লুয়েন্সারদের ফলোয়াররা অনেক ক্ষেত্রেই প্রজাসদৃশ। তাই তারা অনেকটা হয়ে পড়েছেন সামাজিক যোগাযোগকেন্দ্রিক নতুন ‘সামন্তপ্রভু’। জনমত তৈরিতে এঁদের (ইনফ্লুয়েন্সারদের) ব্যাপক প্রভাব রয়েছে এবং তাঁরা জনপ্রিয়ও বটে। কিন্তু এ প্রভাব ও জনপ্রিয়তাই শেষকথা নয়।

ইনফ্লুয়েন্সাররা যোগাযোগ সম্পর্কের ওপর নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। প্রযুক্তির এ যুগে মানুষ বড় একটা সময় ভার্চ্যুয়াল জগতে কাটাচ্ছে। ভার্চ্যুয়াল জগতে বসতি বেড়েছে, বেড়েছে সংযোগ; ভাবের আদান–প্রদানও। দর্শক-শ্রোতার ওপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাব খতিয়ে দেখার সুযোগ রয়েছে।

দর্শক-শ্রোতার ওপর সংবাদমাধ্যমের প্রভাবসংক্রান্ত ২২টি তত্ত্বের সন্ধান পাওয়া যায়। এর মধ্যে গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকের হ্যারল্ড ল্যাসওয়েল ‘ম্যাজিক বুলেট থিওরি’ বা ‘জাদুর টোটা তত্ত্ব’ অন্যতম। এ তত্ত্বে ল্যাসওয়েল উল্লেখ করেন, যিনি বার্তা ছুড়ে দেন, তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে শ্রোতাদের মনোভঙ্গি পরিবর্তন করতে চান এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা পারেন। এ তত্ত্ব অনুসারে দর্শক-শ্রোতাদের ওপর গণমাধ্যমের প্রভাব বুলেটের মতো তীব্র ও তীক্ষ্ণ।

এ তত্ত্বের পটভূমি তৈরি হয়েছিল আমেরিকায় রেডিওতে প্রচারিত নাটক ইনভেশন ফ্রম মার্স থেকে। এ নাটকের একটা অংশে নিউজ বুলেটিন ছিল। এ বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়, মঙ্গল গ্রহ থেকে একটি গ্যাস চেম্বার পৃথিবীর দিকে ছুটে আসছে। এ সংলাপ শুনে মানুষ প্রাথমিকভাবে তা বিশ্বাস করে; বাঁচতে ছোটাছুটি শুরু করে। শ্রোতারা হুড়মুড় করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। রাস্তাঘাটে হৈহুল্লোড় সৃষ্টি হয়।

মিডিয়া লিটারেসি বা সংবাদমাধ্যমসংক্রান্ত জ্ঞান কম থাকায় তারা বিশ্বাস করেছিল, সত্যি বুঝি মঙ্গল গ্রহ থেকে পৃথিবীকে আক্রমণ হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর শ্রোতারা বুঝতে পারেন এটা নাটক, সত্যি ঘটনা নয়। তখন তাঁরা স্থির হন, ঘরে ফেরেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাব ‘জাদুর টোটা তত্ত্বের’ মতো হয়ে উঠছে। তাঁরা যা বলছেন, অনেক দর্শক তা বিশ্বাস করছেন। কারণ, মানুষ মিডিয়াবাহিত তথ্যে প্রাথমিকভাবে সত্য বলে ধরে নেয়। যাচাই-বাছাই করেন না। অনেকের যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগও নেই।

জনগণের মধ্যে মিডিয়া লিটারেসি বা গণমাধ্যম সাক্ষরতার অভাব এর অন্যতম কারণ। ভুয়া তথ্য, অপতথ্য ও গুজবের প্রবাহ যে মাত্রায় বেড়েছে, সেখানে সত্য চেনা সহজ কাজ নয়। কারণ, সত্য দিয়ে হয়তো কাজ হচ্ছে না বলেই বেশি মিথ্যা বলছে। মিথ্যার বাণিজ্যিক মূল্য কয়েক গুণ বেড়েছে। বলা হচ্ছে কেবল সত্যের নয়, মিথ্যারও রয়েছে অজস্র ক্রেতা।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে দর্শক-শ্রোতা যা দেখে তাই বিশ্বাস করে, সংবদ্ধ হয় এবং আওয়াজ তোলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘিরে তৈরি হচ্ছে একধরনের বিশেষ মব (বাছবিচারহীন জনতার জমায়েত)। ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাব এত বেশি যে মানুষকে তারা ‘দৌড়ের ওপর’ রেখেছেন। এক তথ্য ধারণ করার আগেই আরেক তথ্য এসে হাজির হচ্ছে; বানের পানির মতো তথ্য। এক অস্থির ও বিচিত্র দাবিনির্ভর সমাজ গড়ে তুলেছেন ইনফ্লুয়েন্সাররা।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে, ইনফ্লুয়েন্সাররা প্রতিদিন নানা বিষয়ে মন্তব্য ও বিশ্লেষণ হাজির করছেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, উপদেষ্টা পরিষদ, প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক, খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম ও সিদ্ধান্ত এবং সংবাদমাধ্যমসহ সমকালীন নানা ইস্যুতে ইনফ্লুয়েন্সাররা অনেক বেশি তৎপর। মিডিয়া লিটারেসি (গণমাধ্যম সাক্ষরতা) বা বিশ্লেষণাত্মক মনোভঙ্গি না থাকলে তারা যেসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন, সেগুলোকে ক্রিটিক্যালি (যাচাই–বাছাইপূর্বক) গ্রহণ করা বা বিবেচনায় নেওয়া সহজ ব্যাপার নয়।

যেসব দর্শক, তাঁদের ভিডিও দেখেন, তাঁদের মন্তব্য পড়লে ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে তাঁদের মানসিক সখ্য বা নৈকট্যের গতিধর্ম আঁচ করা যায়। দর্শকদের অভিব্যক্তি হয় মূলত তীব্র আবেগনির্ভর। কারণ, ইনফ্লুয়েন্সাররা দর্শকের আবেগের অংশ নিয়ে কাজ করেন, যুক্তির অংশ নিয়ে নয়।

ভিডিওগুলোতে নিক্ষিপ্ত বিষাক্ত বাণ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, রাগ-ক্ষোভ, বিরক্তি, তথ্য ও মানহীন তথ্যের মিশেল, যা মানুষ সহজে গ্রহণ করছে। ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার কারণে এ সমাজে বেশির ভাগ মানুষ ‘পরাজিত মানসিকতা’ নিয়ে বাস করেন। এ কারণে একজন যখন অন্যজনকে গালি দিচ্ছে বা সহিংস আচরণ করছে, তখন অনেক দর্শক-শ্রোতা তাতে বিনোদন খুঁজে পাচ্ছেন। সংঘাত, ক্লেদ, ঘৃণা, স্ল্যাং, অন্যকে হেয় করার বাণিজ্যিক মূল্য এখন বেড়ে গেছে।

ইউভাল নোয়া হারারি তাঁর নেক্সাস বইয়ে উল্লেখ করেছেন, খণ্ডিত তথ্য, ভুল বিশ্লেষণ এবং অপতথ্য চিকিৎসকদের রোগের কারণ চিহ্নিত করতে বাধা সৃষ্টি করে। ঠিক তেমনি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারদের রগরগে উপস্থাপনায় বিষয়ের বাস্তবতা বোঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

ইনফ্লুয়েন্সাররা সবকিছু বদলে দিতে চান তাঁদের মতো করে। ইনফ্লুয়েন্সাররা তাঁদের মতো করে সমাজ গড়তে চান। তাই তাঁদের শত্রু অনেক; তাঁরা নানা রঙের শত্রু খুঁজতে বের হয়েছেন। ইনফ্লুয়েন্সাররা টার্গেটকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কখনো বড়, আবার কখনো অতিক্ষুদ্র অথরিটি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেন। অবয়ব বা সারবত্তার চেয়ে কাউকে বড়, বিকৃত করে দেখানো ‘অতিরঞ্জন’, যা ন্যায়সংগত নয়। এই ‘অতিরঞ্জন’ ইনফ্লুয়েন্সারদের এক বিশেষ মনোভঙ্গি।

তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা ও অভিযুক্তের মন্তব্য—কোনো কিছুকেই তাঁরা বিবেচনায় নিতে চান না। তাঁদের কাছে মন্তব্য অবারিত কিন্তু বস্তুনিষ্ঠতা বৃহৎ অর্থে দুর্লভ। ব্যক্তি আক্রমণ, বিষয়ের নাটকীয় উপস্থাপন ও গালিগালাজ হলো কনটেন্ট নির্মাণে বিশেষ রসদ।

তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা ও অভিযুক্তের মন্তব্য—কোনো কিছুকেই তাঁরা বিবেচনায় নিতে চান না। তাঁদের কাছে মন্তব্য অবারিত কিন্তু বস্তুনিষ্ঠতা বৃহৎ অর্থে দুর্লভ। ব্যক্তি আক্রমণ, বিষয়ের নাটকীয় উপস্থাপন ও গালিগালাজ হলো কনটেন্ট নির্মাণে বিশেষ রসদ।

আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি, কালার–গ্রাফিকস মিলেমিশে অতি সস্তা বিষয়কেও তাঁরা ‘বিশ্বাসযোগ্য’ করে উপস্থাপন করতে চায়। এটা করতে গিয়ে তাঁরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেন না। তাঁরা অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করেন। তাঁদের কনটেন্টের নেই কোনো সেন্সর, নেই সম্পাদনা, মতপ্রকাশে নেই নীতি–নৈতিকতার বালাই। এ ধরনের মতপ্রকাশ মুক্তচিন্তা হতে পারে না। মতপ্রকাশ হতে হবে যৌক্তিক ও তথ্য-উপাত্তনির্ভর।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সাররা বিচারব্যবস্থার সমান্তরালে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা ফৌজদারি আদালতের মতো বিচার শুরু করেছেন। তাঁদের একক বিচারে নিজেই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন, সুবিধাজনক তথ্য-উপাত্ত হাজির করে নিজেই সিদ্ধান্ত দেন। আর সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নেমে পড়ে অনুগত ফলোয়ার বাহিনী।

অধ্যাপক ফাহমিদুল হক যাঁদের বলছেন ‘মব’ এবং মবকে যাঁরা সংগঠিত করেন, তাঁরা হলেন মব ‘মোবিলাইজার’। এ ধরনের সামাজিক যোগাযোগভিত্তিক বিচারিক প্রক্রিয়ার সুবিধা হলো, এ ধরনের কর্মকাণ্ড পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে সেরে ফেলা যায়।

গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েন্সাররা সামন্তপ্রভুর মতো গজিয়ে উঠছেন। তাঁদের লাখ লাখ অনুসারী। অনুসারী ও ইনফ্লুয়েন্সার একই ইকোচেম্বারে বাস করেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সুইডিশ নাগরিক জাহিদ হাসান তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ইকোচেম্বারে সামাজিক মাধ্যমে ব্যক্তির মতামতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয়গুলো দেখায়। ব্যক্তির বিদ্যমান বিশ্বাসকে দৃঢ় করে এবং বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিপক্ষ মনে করে।

বড় অনুসারী বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইনফ্লুয়েন্সাররা। একজন ইনফ্লুয়েন্সারের সঙ্গে আরেকজন ইনফ্লুয়েন্সারের নেক্সাসও গড়ে উঠছে। নিজেদের মতো বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি নির্মাণ করতে চাইছেন। ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে অনুসারীদের রয়েছে অচ্ছেদ্য সম্পর্ক—যোগাযোগতত্ত্বে যাকে ‘প্যারাসোশ্যাল রিলেশনশিপ’ বলা হয়। অনুসারী হয়তো কখনো ইনফ্লুয়েন্সারকে দেখেননি কিন্তু তাঁর তৈরি কনটেন্ট দেখতে দেখতে ও শুনতে শুনতে তাঁর আপনজন হয়ে গেছেন। এ কারণে তাঁদের প্রভাব হয় বুলেটের মতো তীব্র ও তীক্ষ্ণ।

অধ্যাপক ফাহমিদুল হকের ভাষায়, এই ফলোয়ার হলো ‘মব’। ইনফ্লুয়েন্সার ও ফলোয়াররা মিলে প্রচলিত সংবাদমাধ্যম, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক দলের জন্য হুমকি তৈরি করছেন। দর্শক-পাঠক কেবল সরকার, রাজনৈতিক গোষ্ঠী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সুবিধাবাদী গোষ্ঠী বা গোপন দলগুলোর হুমকির সঙ্গে পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে যে নতুন সামন্ত প্রভুরা বিকশিত হচ্ছে, তার হুমকিও কম নয়।

কারণ, তাঁরা যে ঘৃণা–বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন, তা কেবল গণমাধ্যম বা সংবাদমাধ্যমেই আটকে থাকছে না। ফিলিপিনো নোবেলজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসা তাঁর হাউ টু স্ট্যান্ড আপ টু আ ডিক্টেটর গ্রন্থে লিখেছেন, ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাব বাস্তবজীবনেও পড়ছে। ইনফ্লুয়েন্সাররা নিজেদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনুসারীদের নিয়মিত গরম রাখছেন। দর্শক-শ্রোতারা এসব কনটেন্টে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। তাঁদের পক্ষে মিথ্যা, অপতথ্য, ভুল তথ্য, গুজব বা অতিরঞ্জন চিহ্নিত করা সহজ হচ্ছে না।

অন্যদিকে পোস্টট্রুথ গ্রন্থে লি ম্যাচিংটায়ার উল্লেখ করেন, উত্তরসত্য দুনিয়ায় মানুষ স্বস্তিদায়ক মিথ্যা শুনতে পছন্দ করছে, অস্বস্তিদায়ক সত্য শুনতে আগ্রহ কম। ফ্যাক্টের চেয়ে ফিকশনের প্রতি মানুষের আসক্তি বেড়েছে। এ জনমনস্ততত্ত্ব চেনাটাও জরুরি।

দূষিত কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক বাণিজ্যের মূল রসদ। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড প্রকাশিত এক তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২২ সালে বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েন্সারদের বাজার ছিল ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একসময় কৌটিল্য ‘কথোপজীবীদের’ ওপর কথা বলার জন্য কর বসিয়েছিলেন। এখন বেশি কথা বললে, ভিউ বেশি হলে উল্টো টাকা পাওয়া যায়।

এসব কারণেই ইনফ্লুয়েন্সাররা ভিউ ও লাইকের দিকে ছুটছেন। নীতি-নৈতিকতা বা মান গুরুত্বপূর্ণ নয়। যাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য কনটেন্ট বানাচ্ছেন, তা লাইক বা কমেন্টের বিষয় মাথায় রেখেই বানাচ্ছেন। লাইক বা কমেন্ট এখন মনিটর করা যাচ্ছে, ক্ষণে ক্ষণে টাকার হিসাব কষা যাচ্ছে।

ইনফ্লুয়েন্সাররা এমন সব কনটেন্ট বানাচ্ছেন, যাতে দ্রুত মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়। ভিউ হলো পপুলার কালচারের একটি বিশেষ অংশ, যার সারবত্তা বলে কিছু নেই। ভিউ–প্রবণতার বড় ধাক্কা এসে পড়েছে ব্যক্তির স্বাধীনতা, গোপনীয়তা ও মানবিক মর্যাদার ওপরে।

খুব সহজ করে বললে মানুষ কী খাবে বা তাকে খাওয়ানো যাবে, তা–ই হয়ে উঠছে ইনফ্লুয়েন্সারদের তৎপরতার মূল লক্ষ্য। তাঁরা তৈরি করছেন বাধ্যতামূলক দর্শকশ্রেণি। অর্থাৎ যে ইনফ্লুয়েন্সারকে ভিউ করা হচ্ছে, তাঁর কাছে সমর্পিত হচ্ছে দর্শক। আপডেট, বিষয়বস্তু, নতুনত্ব নিয়ে অপেক্ষায় থাকছে।

অর্থাৎ একটি অপেক্ষমাণ, অস্থির শ্রেণিও তৈরি করছেন ইনফ্লুয়েন্সাররা। শুধু তা–ই নয়, ইনফ্লুয়েন্সাররা ট্যাগিং উৎসাহিত করছেন। ঘোষণা দিচ্ছেন, যাঁরা এ বক্তব্যের বিপক্ষে যাবেন, তাঁরা ‘গণশত্রু’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

প্রতিটি দেখানোর রয়েছে রাজনীতি। উত্তরাধুনিক তাত্ত্বিক মিশেল ফুকো এই ভিজিবিলিটি বা দৃশ্যমানতাকে ফাঁদ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। পাঠক-দর্শকদের বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া ইনফ্লুয়েন্সারদের এই দৃশ্যমানতার ফাঁদ থেকে বাঁচার সহজ পথ কী?

Facebook Comments Box

Posted ১০:০৭ এএম | মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।