নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০২৫ | প্রিন্ট | 138 বার পঠিত
পবিত্র কোরআন নাজিলের জন্যই রমজান মাসের ফজিলত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাস, যে মাসে নাজিল করা হয়েছে আল–কোরআন, মানুষের জন্য হেদায়েত রূপে এবং পথনির্দেশনার প্রমাণ ও সত্য-মিথ্যা পার্থক্য নিরূপণকারী হিসেবে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৮৫)। শবে কদরের ফজিলত কোরআন নাজিলের কারণেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় আমি কদরের রাতে কোরআন নাজিল করেছি।’ (সুরা-৯৭, আয়াত: ১) মক্কা–মদিনার ফজিলতও কোরআন নাজিলের কারণেই।
কোরআনের সংস্পর্শেই স্বল্প মূল্যের গিলাফ ও সাধারণ রেহালের সম্মান। যে মানুষ যত কোরআনের ধারক–বাহক হবেন, তাঁর সম্মানও তত অধিক হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোরআনওয়ালাই আল্লাহওয়ালা এবং আল্লাহর খাস পরিবারভুক্ত।’ (মুসনাদে আহমাদ: ১২২৯২)। ‘যে অন্তরে কোরআন নেই, তা যেন পরিত্যক্ত বিরান বাড়ি।’ (তিরমিজি: ২৯১৩)। ‘হাশরে বিচারের দিনে কোরআন তোমার পক্ষে বা বিপক্ষে সাক্ষী হবে।’ (মুসলিম: ২২৩)
তিনটি জিনিস শুধু দেখলেই সওয়াব হয়, তা হলো কোরআনে করিম, কাবা শরিফ ও পিতা–মাতার চেহারা মোবারক। নবীজি (সা.) বলেন, ‘কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত সর্বোত্তম ইবাদত।’ (বায়হাকি)
সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব কোরআনে করিম, যা সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা হজরত জিবরাইল (আ.)–এর মাধ্যমে সর্বশেষ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর ওপর নাজিল হয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত আর নতুন কোনো আসমানি কিতাব আসবে না। কিয়ামত পর্যন্ত সব মানুষের দুনিয়ার শান্তি ও পরকালীন মুক্তির একমাত্র পথনির্দেশ কোরআন মাজিদ। কোরআন পাঠ ব্যতিরেকে প্রধান ইবাদত নামাজও আদায় হয় না। তাই সহিহভাবে কোরআন তিলাওয়াত শেখা ফরজে আইন।
‘কোরআন’ অর্থ পড়া, পাঠ করা, পাঠযোগ্য, যা বারবার পাঠ করা হয়। কোরআন মাজিদ দুনিয়ার সর্বাধিক পঠিত, সর্বাধিক ভাষায় অনূদিত ও সর্বাধিকসংখ্যক প্রকাশিত গ্রন্থ। ‘কোরআন’ অর্থ কাছে যাওয়া, নিকটে হওয়া। কোরআন পঠন ও অনুশীলনের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভ করে। (লিসানুল আরব) কোরআন আল্লাহর কালাম, আল্লাহর খাস সিফাত বা বিশেষ গুণ। কোরআন সৃষ্ট নয়। লিপি, পাঠ ও ভাব—এই তিনের সমন্বিত নাম কোরআন। (শারহুল আকাইদ)
কোরআনে করিম তিলাওয়াত, চর্চা ও অনুশীলন না করলে রোজ কিয়ামতে আল্লাহর আদালতে প্রিয় রাসুল (সা.) অভিযোগ করবেন, ‘হে আমার রব! এই লোকেরা কোরআন পরিত্যাগ করেছিল।’ (সুরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ৩০) কোরআন মাজিদ শিক্ষা করা ফরজ, অশুদ্ধ বা ভুল পাঠ করা পাপ। যাঁরা পড়তে জানেন না, তাঁদের শিখতে হবে, যাঁরা শিখে ভুলে গেছেন, তাঁদের আবার পড়তে হবে, যাঁরা ভুল পড়েন, তাঁদের সহিহ শুদ্ধ করতে হবে। তিন প্রকার লোকের তিলাওয়াতের ভুল মাফ হবে—যাঁরা সহিহ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন, যাঁরা সহিহ করার চেষ্টায় রত আছেন, যাঁদের সহিহ শিক্ষার সুযোগ নেই বা সহিহ ও ভুলের জ্ঞান নেই।
কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত করা এবং তিলাওয়াত শোনা ও শোনানো ইবাদত। রাসুলে আকরাম (সা.) নিজে পাঠ করে সাহাবিদের শোনাতেন এবং সাহাবিদের কাছ থেকেও তিলাওয়াত শুনতেন। প্রতি রমজান মাসে এর আগে যতটুকু কোরআন নাজিল হয়েছে, তা নবীজি (সা.) হজরত জিবরাইল (আ.)–কে শোনাতেন এবং হজরত জিবরাইল (আ.)–ও তা নবীজিকে শোনাতেন। নবীজি (সা.) জীবনের শেষ রমজানে উভয়ে উভয়কে দু–দুবার করে পূর্ণ কোরআন পাঠ করে শোনান। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
কোরআনে করিম না বুঝে পড়লেও সওয়াব রয়েছে; কিন্তু বুঝে পড়লে অনেক বেশি নেকি হয়। ‘কোরআন তিলাওয়াতে প্রতি হরফে কমপক্ষে ১০টি করে নেকি হয়, প্রতিটি নেকি আল্লাহ ১০ গুণ করে দেন।’ (তিরমিজি: ২৯১০) রমজানে প্রতিটি আমলের প্রতিদান ৭০ থেকে ৭০০ গুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। রমজানে বেশি বেশি কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত করা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ও রমজানের খাস সুন্নত আমল। সাহাবায়ে কিরাম কোরআন বুঝতেন এবং বেশি বেশি তিলাওয়াতও করতেন। বিশিষ্ট সাহাবিরা প্রায় প্রতি সাত দিনে এক খতম কোরআন পড়তেন, তাই কোরআনে সাত মঞ্জিল।
Posted ২:২৫ পিএম | বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০২৫
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।