নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট | 75 বার পঠিত
ভয়াবহ বন্যায় টানা ৫ দিন পানিবন্দি হয়ে আছেন চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ২ লাখেরও বেশি মানুষ। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফেনী নদীর পানির উচ্চতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রায় ১৬৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলো পানিতে ডুবে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে আসা পানিবন্দিদের মাঝে পৌঁছানো যাচ্ছে না ত্রাণ।
সোমবার (২৬ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফেনী-কুমিল্লার কয়েকটি অংশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পানি ওঠায় দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। বড় ধরনের উদ্ধার অভিযান ও পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা না পেলে চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্বেচ্ছাসেবী ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।
স্থানীয়রা বলছেন, একদিকে বন্যায় পানিবন্দি লাখো অসহায় মানুষ, অন্যদিকে ফেনী নদীর ভাটিতে অবস্থিত দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প মুহুরীর দুটি গেট পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। অকেজো হয়ে আছে আরও দুটি গেট। এ কারণে একদিকে জোয়ারের সময় ফেনী নদী হয়ে অভ্যন্তরে ঢুকছে বঙ্গোপসাগরের পানি। আবার ভাটার সময় দুটি গেট অকেজো থাকার কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে বিবেচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যান চলাচল করছে অনেক ধীরগতিতে। গত কয়েকদিন পথে আটকে থাকায় মালবাহী অনেক যানবাহনে থাকা নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচা ভোগ্যপণ্য নষ্ট হয়ে গেছে।
মুহুরী প্রকল্পের গেট ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে জানতে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদ শাহরিয়ারকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ দিকে মীরসরাই উপজেলার বাজারগুলোতে বন্যার প্রভাবে ও সরবরাহ কমে শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলার কোনও বাজারে দুদিন আগে থেকেই চিড়া, মুড়ি ও গুড় পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে সবজি থাকলেও বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। এছাড়া আলু, পেঁয়াজ কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।
মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি (পরিদর্শক) সোহেল সরকার বলেন, রোববার বিকেল পর্যন্ত মীরসরাইয়ের মিঠাছরা বাজার ঢাকামুখী লেনে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। মহাসড়কের ফেনী অংশে প্লাবিত হওয়ায় গাড়ি চলাচল করছে অত্যন্ত ধীরগতিতে।
হাইওয়ে পুলিশের ফাজিলপুর হাইওয়ে থানার ওসি (পরিদর্শক) রাশেদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামমুখী লেনে মুহুরীগঞ্জ ও লেমুয়ায় এখনও পানি রয়েছে, তাই এই লেনে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। পানি কমে গেলে এই লেনে গাড়ি চলাচল শুরু হবে।
মীরসরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশান্ত চক্রবর্তী সর্বশেষ বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে বলেন, শনিবার রাত থেকে রোববার পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। সোমবার কিছু কিছু এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, যুব রেডক্রিসেন্ট অ্যালামনাই, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং শিক্ষার্থীরা পৃথক পৃথকভাবে বানভাসী মানুষদের উদ্ধার এবং তাদের মাঝে বিশুদ্ধ পানীয়, ওষুধ ও খাবার বিতরণ করছেন।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ বারইয়ারহাট জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হেদায়েত উল্যাহ ও মীরসরাই জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আদনান আহমেদ বলেন, কিছু কিছু এলাকায় পানির তীব্রতা কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়েছে। এখনো বন্যাকবলিত অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎসেবা দেওয়া যাচ্ছে না। প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে।
Posted ১:০৫ পিএম | সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।