মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে
শিরোনাম >>

পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগের ভবিষ্যৎ কী

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   46 বার পঠিত

পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগের ভবিষ্যৎ কী

পাটের পলিথিন প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমদ খান। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আমরা যেটুকু আবিষ্কার করেছি, এ দেশের উপাদান দিয়ে। তা বিশ্ববাজারে পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য কিছু সময় লাগবে। আমরা উদ্ভাবন করেছি; তা বিপণনের দায়িত্ব সরকারের।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার এই প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন, যা সামনের জুলাই মাসে পাব। আমার ক্ষেত্রে সরকার অনেক ইনভেস্ট করেছেন।’

আসলে বিজ্ঞানীর কাজ পণ্য উৎপাদন ও বিপণন না। ফলে তিনি মেশিন কিনে সোনালি ব্যাগ উৎপাদন করবেন এবং সরকার সেটা বিপণন করবে—এই মডেল আজকের যুগে কাজ করে না, অবধারিতভাবে একটা লোকসানি প্রকল্প হতে পারে। বিপণনের নামে সরকারি লোকেরা দুর্নীতির হাট খুলে বসবেন। তা ছাড়া পণ্য ডিজাইন, সাপ্লাই চেইন তৈরি, প্রাইস-কোয়ালিটি কম্পিটিটিভনেস বিষয়ে সরকারি লোকেরা পর্যাপ্ত আধুনিক জ্ঞান রাখেন না।

দরকার ছিল বিজ্ঞানীকে ‘রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’-এ রেখে পেশাদার কোনো কোম্পানিকে (এসিআই, আকিজ, স্কয়ার ইত্যাদি যারা আগ্রহী) দিয়ে পণ্য ডিজাইন, ম্যানুফ্যাকচারিং ও বিপণন মডেলে যাওয়া।

সত্যি বলতে কি, আমাদের অনেক দেরি হয়ে গেছে। পাঁচ বছরেও বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসেনি পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ! উল্লেখযোগ্য, এই উদ্ভাবনের পর গত পাঁচ বছরে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, কোরিয়ান বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগের (বায়োপলি) আন্তর্জাতিক বাজার বিভিন্ন কোম্পানি দখল করে ফেলেছে।

এখানে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, চীন, ইতালি, ভারতের বহু কোম্পানি চলে এসেছে। এসব খেলোয়াড়ের দখলে চলে যাওয়া বাজারে ঢুকতে হলে বাড়তি কিছু লাগবে বাংলাদেশের। বিশেষভাবে ১. মূল্য প্রতিযোগিতা, ২. ম্যানুফ্যাকচারিং প্রযুক্তির উৎকর্ষ, ৩. আকর্ষণীয় ডিজাইন, ৪. কাস্টমার চাহিদা, ৫. ডি কম্পোস্ট সার্টিফিকেশন, পরিবেশগত সনদ ইত্যাদি। পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে বায়োপলি উৎপাদনের জন্য ডাইভার্স কাঁচামালের উৎস।

আমি মনে করি না, সরকারি বিপণন মডেল এসব অ্যাড্রেস করতে পারবে। বাংলাদেশের সরকারি পাট খাত চটের বস্তা আর অচল কার্পেট ছাড়া বিশ্বকে বাহারি পণ্য উপহার দিতে পারেনি। অধিকন্তু দেশীয় বাজারে বায়োপলি হিসেবে সোনালি ব্যাগের সাধারণ ব্যবহার এবং বাধ্যতামূলক ব্যবহারের ইউজ কেস ও পলিসিও তৈরি হয়নি।

পাটের পলিথিন বা সোনালি ব্যাগ একটি সেলুলোজভিত্তিক বায়োডিগ্রেডেবল বায়োপ্লাস্টিক, যা প্লাস্টিক ব্যাগের একটি বিকল্প। পাট থেকে এই সেলুলোজ সংগ্রহ করতে চাইছেন ড. মোবারক। পাটগাছ সেলুলোজের ভালো উৎস।

তবে বিশ্বে প্ল্যান্টবেজ সেলুলোজের বহু বিকল্প আছে। ভুট্টা স্টার্চ, আলু স্টার্চ, কাসাভা স্টার্চ, ধান বা গমের খড়, আখের ছোবড়া ইত্যাদি সেলুলোজের উৎস। বাঁশের ফাইবার সেলুলোজের ভালো উৎস। ইউক্যালিপটাস টাইপ কাঠ সেলুলোজের উচ্চ উৎস (তবে এ জন্য টেকসই বনায়নের অনুশীলন প্রয়োজন)। এ ছাড়া শণজাতীয় গাছের ডাঁটায় উচ্চমাত্রার সেলুলোজ থাকে। কাগজ, পিচবোর্ড ইত্যাদি পণ্য পুনর্ব্যবহারের ফলে সেলুলোজ ফাইবার পুনরুদ্ধার করা যায়, এতে ভার্জিন সেলুলোজ উৎসের ওপর নির্ভরতা কমে।

দেখুন, ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত দেশের দরকার পলিথিনের বিকল্প (বায়োব্যাগ)। তাদের পাটের সোনালি ব্যাগ জরুরি নয়। দরকার পলিথিনের টেকসই বিকল্প। তাই সেলুলোজভিত্তিক বায়োডিগ্রেডেবল বায়োপ্লাস্টিক-এর সেলুলোজ শুধু পাট থেকেই আসতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা ক্রেতাদের নেই। উপরন্তু ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে পাটভিত্তিক সেলুলোজ উৎপাদন চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশের কৃষিজমিতে খাদ্যশস্য না ফলিয়ে লার্জস্কেলে পাটজাত সেলুলোজ তৈরিতে ব্যবহার করতে গেলে খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়বে।

এমনিতেই খাদ্য আমদানিতে ২০২১ সালে বিশ্বে তৃতীয় শীর্ষ স্থানে পৌঁছেছে বাংলাদেশ।

তাহলে সেলুলোজের বিকল্প উৎস কী? বায়োপলি বাজারজাতকরণের আগে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নকে অ্যাড্রেস করতে হবে। অর্থাৎ পাটের বাইরেও প্ল্যান্টবেজ সেলুলোজের উৎস খুঁজতে হবে, সেটা টেকসই পরিবেশ এবং বনায়নের ভারসাম্য রক্ষা করেই। বায়োব্যাগের বাজারে পাট উৎসের সোনালি ব্যাগ ডজন ডজন পণ্যের একটিমাত্র হতে পারে, এ দিয়ে বায়োপলির বাজার দখল অসম্ভব।

আমরা যদি বিশ্ববাজারে বায়োব্যাগ উৎপাদনের কাঁচামাল দেখি, সেখানে প্ল্যান্টবেজ বায়োপলির পাশাপাশি রয়েছে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক, বায়োডিগ্রেডেবল অ্যাডিটিভস, পেপার ও পিচবোর্ড, বায়োডিগ্রেডেবল কম্পোজিট ইত্যাদি, উল্লেখযোগ্য আসে বর্জ্য থেকে।

বাংলাদেশের বায়োডিগ্রেডেবল হোম ডেকোরেশন কোম্পানিগুলো গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হতে পারে।

গার্মেন্টস জুটের পাশাপাশি তারা কলার ফাইবার, আনারস ফাইবার ইত্যাদিকে থেকে সুতা তৈরি করছেন।

ব্যবহার করছে কচুরিপানা, সুপারির খোল, হোগলা ইত্যাদি। অর্থাৎ লার্জস্কেলে শিল্পপণ্য হিসেবে বায়োব্যাগ সরবরাহ করতে শুধু পাটনির্ভর সেলুলোজ একক টেকসই বিকল্প নয়, ভিন্ন বহু উৎস লাগবে, যা বর্জ্যভিত্তিক হওয়া ভালো।

 

Facebook Comments Box

Posted ১১:৩৩ এএম | শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।