শনিবার ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

দেশে ৪৩ ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কাজ করছে ১০ লাখ শিশু

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ০১ মে ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   17 বার পঠিত

দেশে ৪৩ ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কাজ করছে ১০ লাখ শিশু

শরিফুল ইসলামের ছেলে আরিফুল ইসলাম। বয়স ১৪ ছুঁইছুঁই। গ্রামের বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার নওয়াপাড়ায়। এ বয়সে মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার কথা তার। অথচ আরিফুল সকাল-সন্ধ্যা ব্যস্ত থাকে তামাক পাতা সংগ্রহের কাজে। মাঠ থেকে তামাক সংগ্রহ করে সেগুলো শুকানো ও সংরক্ষণের কাজ করে সে। বিনিময়ে দৈনিক মজুরি পায় পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা। সেই টাকা পরিবারের হাতে তুলে দেওয়াতেই যেন সব আনন্দ তার।

শুধু আরিফুল ইসলাম নয়, তার মতো শত শত শিশুর শৈশব এখন তামাকের মাঠে বন্দি। অল্প বয়সে নিজেদের তামাক সংরক্ষণের কাজে জড়িত করায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে আরিফুলের মতো আরও অনেক শিশুশ্রমিক।

ঘড়িতে তখন সকাল ৭টা। রাজধানীর মিরপুর ৬০ ফুট এলাকায় থামে একটি লেগুনা। লেগুনার পাদানি থেকে নেমেই ‘মিরপুর নামেন’ বলে উচ্চস্বরে হাঁক দেয় এক শিশু, পরক্ষণেই ‘ওই রেডিও রেডিও’ কণ্ঠ ভেসে আসে। জীবনের এ এক কঠিন বাস্তবতা। অপরিচ্ছন্ন পোশাকে মলিনতা গ্রাস করলেও মুখমণ্ডলের কোমলতা জানান দেয় এখনো শৈশব পেরোয়নি তার। নাম জানতে চাইলে মৃদু হেসে বলে জসিম।

লেগুনায় হেলপারের কাজ কখন থেকে শুরু করেছ, জানতে চাইলে ১০ বছর বয়সী জসিম জানায়, সকাল সাড়ে ৬টা থেকে কাজ শুরু হয়েছে, চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। মাঝে সকাল, দুপুর আর রাতের খাবারের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ মিনিট করে বিশ্রাম মেলে। দিন শেষে এসব শিশুকে দৈনিক মজুরি হিসেবে তিন থেকে সর্বোচ্চ চারশ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। অবশ্য তিন বেলা খাবারের খরচ লেগুনার চালকই দেন।

জসিম দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারায়। সঙ্গে সঙ্গে তার পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে যায়। তার মা একজন পোশাকশ্রমিক। মা-ছেলে মিলে থাকে ৬০ ফিট এলাকায়। কাজ শেষে মায়ের হাতে তিনশ টাকা তুলে দিয়েই পৃথিবীর সব তৃপ্তি খুঁজে পায় জসিম। তার মতো এমন আরও বহু শিশু শ্রমিকের জীবনের চাকা ঘুরছে এভাবেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, লেগুনায় যারা হেলপারের কাজ করে তাদের অধিকাংশই জসিমের মতো শিশু। লেগুনার পাদানিতে দাঁড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় তাদের। একটু এদিন-ওদিক হলেই পা ফসকে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। হয়তো থেমে যেতে পারে জীবনের চাকা। তারপরও প্রতিদিন নিয়ম করে কাজে বের হতে হয় এই শিশুদের।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানায়, বর্তমানে (২০২২) দেশে মোট শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ জন হয়েছে। অথচ ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ জন। এসব শিশুর মধ্যে বর্তমানে ১০ লাখ ৬৮ হাজার ২১২ জন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। দেশের ৫-১৭ বছর বয়সী শিশুরা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কাজ করছে। এরমধ্যে পাঁচটি খাতে ৩৮ হাজার আটজন শিশু কাজ করছে। যার ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশই ছেলে। সবচেয়ে বেশি কাজ করছে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে।

শিশুশ্রম নিয়ে বিবিএসের করা এক জরিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) প্রকাশিত ওই জরিপে বিবিএস বলছে, বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৩টি খাতকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এসব খাতের তালিকা থেকে পাঁচটি খাত নির্বাচন করে বিবিএস।

এগুলো হলো- ১. মাছ, কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, ২. চামড়ার তৈরি পাদুকা শিল্প, ৩. লোহা ও ইস্পাত ঢালাই, ৪. মোটর যানবাহন মেরামত বা অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ এবং ৫. স্থানীয় টেইলারিং ও পোশাক খাত।

Facebook Comments Box

Posted ১০:১৫ এএম | বুধবার, ০১ মে ২০২৪

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।