নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪ | প্রিন্ট | 128 বার পঠিত
ভুল ও অসংগতিপূর্ণ কোনো তথ্য লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ার নাম ‘গুজব’। বর্তমান সময়ে গুজব একটি সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে সমাজের বিভিন্ন মানুষের মধ্যে ভুল, মিথ্যা, ভিত্তিহীন, অসত্য তথ্য রটিয়ে দেয়। আবার রাজনীতিতে গুজবকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কার্যক্রম নিয়ে নীতিবাচক তথ্য ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বিভেদ, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ফায়দা লোটে অন্যপক্ষ।
আগেকার দিনে সাধারণত গুজব ছড়ানোর জন্য মানুষকে ব্যবহার করা হতো। তারা বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে অসত্য তথ্য মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিত। যার মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ত; কিন্তু এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির কল্যাণে পাল্টে যাচ্ছে মানুষের জীবন-জীবিকা, দৈনন্দিন কাজ। আমাদের কোনো বিষয় যেমন—কোনো বই, দর্শনীয় স্থান, কোনো বিখ্যাত ব্যক্তিসহ যে কোনো কিছু জানতে হলে প্রথমেই ইন্টারনেটের কথা মাথায় চলে আসে। ইন্টারনেট বর্তমানে শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনোদন, তথ্য আদান-প্রদান, সরকারি ও বেসরকারি অফিসিয়াল কার্যক্রম সব ক্ষেত্রেই আধিপত্য বিস্তার করেছে। ইন্টারনেটের ব্যবহার আমাদের জীবনকে সহজ থেকে সহজতর করে দিচ্ছে। ইন্টারনেট বর্তমান সময়ে তথ্য প্রেরণের একটি দ্রুত মাধ্যম। এটি নির্বিঘ্নে, সহজে ও তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করতে পারে। কোনো ব্যক্তি তার কম্পিউটারে বা মোবাইলে ক্লিক করে পৃথিবীর অন্য প্রান্তের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। কিন্তু বিপত্তি এখানেই, একটি মুদ্রার যেমন দুটি পিঠ আছে, ঠিক তেমনি ইন্টারনেটেরও ভালো এবং মন্দ দিক রয়েছে। হাজার হাজার মানুষের মধ্যে সব মানুষই ভালো, এমন নয়। সাধারণ মানুষ যেমন নিজের দৈনন্দিন কাজে ইন্টারনেট সুবিধা ব্যবহার করে, তেমনি দুষ্ট ও খারাপ মানুষও ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য। নিজেদের কার্যসিদ্ধির জন্য মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেয় ইন্টারনেটে। গুজব ছড়ানো দুষ্ট প্রকৃতির মানুষগুলোও এখন প্রযুক্তিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসত্য ভিডিও, মিথ্যা সংবাদ, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা কয়েক মিনিটের মধ্যে কয়েক লাখ মানুষ দেখে। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর এক প্রান্তের ওই গুজব আরেক প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে সাংঘাতিক বিপর্যয় নেমে আসে। মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ায় নিয়ন্ত্রণ ও ঠেকানো চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে।
ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে এসব মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ—একটি ভোজ্যতেল প্রস্তুতকারী কারখানায় আগুন লেগেছে, সামান্য পরিমাণ ক্ষতিও হয়েছে। আগুন লাগার ভিডিও চিত্রটি ধারণ করে এডিট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন ক্যাপশন দিল ‘ভয়াবহ আগুনে ভস্মীভূত তেল প্রস্তুতকারী কারখানা’। গুজবটি মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। গুজবটি রটে যাওয়ার পর অন্য সব কোম্পানি কৃত্তিমভাবে বাজারে সংকট সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দিল। একটি অসত্য মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়ায় বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট সৃষ্টি হওয়ায় ভোক্তাকে বাড়তি টাকা দিয়ে তেল কিনতে হলো। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার বক্তব্যের খণ্ডাংশ এডিট করে ভুলভাবে প্রচারের মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের গুজব সবচেয়ে বেশি ছড়ানো হয়। এতে করে রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিবেশ ও রাজনৈতিক দাঙ্গা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দেশের প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক পত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ফটো কার্ডেও লোগো ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসত্য সংবাদ, অসত্য তথ্য ছড়িয়ে পড়ার নজির রয়েছে, যা মুহূর্তের মধ্যে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করে এবং মিথ্যা সংবাদটি সত্য বলে প্রতীয়মান হয়। এভাবেও গুজব ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, আমাদের দেশের প্রথম সারির মিডিয়াগুলো বিভিন্ন সময়ে একাধিক সোর্স থেকে যাচাই না করে ব্যতিক্রমধর্মী সংবাদ সবার আগে প্রকাশ করবে—এমন চিন্তাধারা থেকে ভুলক্রমে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে ফেলে। যার মাধ্যমে একটি মিথ্যা সংবাদ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে লোকমুখে রটিয়ে গুজবে পরিণত হয়। যার রেশ খুব ভয়ানক হতে পারে!
সামাজিক বিজ্ঞানের ভাষায়, গুজব একটি বিকৃত সভ্যতা, যা স্বল্প সময়ের মধ্যে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয়। তবে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে মিথ্যা তথ্য বা গুজব রটানো নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। সচেতনতা বাড়াতে অনলাইনসহ সব জায়গায় প্রচার চালাতে হবে।
Posted ১:২২ পিএম | রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।