বৃহস্পতিবার ১৩ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

ইউনূস সরকারের রিপোর্ট কার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   131 বার পঠিত

ইউনূস সরকারের রিপোর্ট কার্ড

আমরা এ দেশে রাজনীতি নিয়েই বেঁচে থাকি। আমাদের শান্তিতে বসবাস আর আর্থিক অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে রাজনীতি। আমরা সব সময় কথা বলি সরকার কেমন চলছে বা দেশ কেমন চালাচ্ছে, কোথায় কীভাবে হোঁচট খাচ্ছে। অথবা জনগণের আশা–আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বাস্তবের মিলই–বা কতটুকু? আমরা যে এসব নিয়ে নির্দ্বিধায় আলোচনা করতে পারছি এবং অনেকেই যে দ্বিমত করবেন—দুটোই আনন্দের। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে সরকার, তারও অর্জন বা ঘাটতি নিয়ে একটা আলোচনা হতে পারে।

স্থিতিশীলতা ও বৈধতা অর্জন: একটা কথা অনস্বীকার্য, অধ‌্যাপক ইউনূসের অংশগ্রহণ ছাড়া এই সরকারের পক্ষে স্থিতিশীলতা অর্জন ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ এত সহজ হতো না। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অধ্যাপক ইউনূসের পরিচিতি ও প্রভাব বিপ্লবোত্তর ‘ছাত্রদের সরকার’কে গ্রহণযোগ্যতা দেয়। ধারাবাহিকভাবে তাঁর বলিষ্ঠ উপস্থিতি অবশ্যই এ সরকারের জন্য বড় প্লাস পয়েন্ট।

গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধীনতা নিয়ে স্পষ্টতা: শেখ হাসিনার সময় যেসব জিনিস ‘হ্যাঁ’ ছিল, জুলাই বিপ্লব রাতারাতি তা ‘না’ করে দিল। একদলীয় শাসনবাবস্থা, নির্বাচনে কারসাজি, সরকারের দলীয়করণ—এগুলোর বিরুদ্ধে অধ্যাপক ইউনূসের সরকার শক্ত অবস্থান নিয়েছে। পরবর্তী নির্বাচনে যে মানুষ ইচ্ছেমতো ভোট দিতে পারবেন, তা নিয়ে সরকার কোনো সংশয় রাখেনি। ব্যক্তিস্বাধীনতারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ব্যক্তিস্বাধীনতা অধরাই থেকে যাবে।

অধ্যাপক ইউনূসের হ্যান্ডস অফ মনোভাব: সরকারপ্রধানেরা কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ গলায় দেশ শাসন করেন। কখনো সরকারের নীতিমালা ব্যাখ্যা করেন মোহময় ভাষায়, কখনো ব্যর্থতা ঢাকেন কথার ফুলঝুরি দিয়ে। কিন্তু অধ‌্যাপক ইউনূস অনেকটা নির্লিপ্ত। তাঁকে সরকারের নীতিমালা বা সাফল্য ও ব্যার্থতা নিয়ে খুব উচ্চবাচ্য করতে সাধারণত দেখা যায় না।

এর সুবিধা হলো, সরকারের লোকদের অনেক বিতর্কিত কথাবার্তা ও কর্মকাণ্ডে অধ্যাপক ইউনূসকে নিজের মত জানাতে হয়নি। অসুবিধা হলো, দেশের বড় বড় সংকট নিয়ে জনগণ তাঁর কাছ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যা পায়নি। তাঁর এই হ্যান্ডস অফ মনোভাব তাই সরকারের জন্য ইতিবাচক; আবার নেতিবাচকও বটে।

রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও নির্বাচনী অঙ্গীকার: একসময় বলা হতো, সরকার নির্বাচনকে পেছাতে বড় সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস এসব সন্দেহকে অমূলক প্রমাণ করে নির্বাচনের সময়সূচি ও সংস্কারের পরিধি ঘোষণা করেছেন। ছাত্রনেতাদের ‘দ্বিতীয় রিপাবলিক’ উচ্চারণের মধ্যেও যে অধ্যাপক ইউনূস ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন, এটা খুবই ইতিবাচক।

স্বাধীনতাযুদ্ধ নিয়ে অস্পষ্টতা: স্বাধীনতাযুদ্ধ ও তার যথাযথ মূল্যায়ন নিয়ে সরকারের নানাজনের কথাবার্তা মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। জুলাই আন্দোলনের নেতারা একটা সময়ে জুলাই বিপ্লবকে সত্যিকার স্বাধীনতা বলে প্রচার শুরু করেন। স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী রাজনীতিকেরা ব্যাপারটাকে লুফে নেন। এ ধোঁয়াশা বিনা কারণে সৃষ্টি করা হয়েছে।

স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন: যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁদের নানাভাবে পুনর্বাসিত করে মর্যাদার আসনে বসানোর চেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শাহ আজিজুর রহমান হল’ করা হয়েছে। শাহ আজিজ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে জাতিসংঘে গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যাকে সমর্থন করেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুছে ফেলা হয়েছে রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের নাম। সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ও প্রশাসকেরা এসবের দায়িত্ব এড়াবেন কীভাবে?

অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা: নতুন সরকার গঠনের পর সবচেয়ে নড়বড়ে খাত ছিল দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাত। ইউনূস সরকারের অর্থনৈতিক দল অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে বিপর্যয়গুলো ভালোভাবে সামাল দিয়েছে। তাদের কার্যক্রমে জনগণ আস্থা পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন রোধ করা গেছে। অন্যান্য বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার মান এখন মোটামুটি স্থিতিশীল। দেশের ব্যাংকিং সেক্টরটা স্বাভাবিক নিয়মে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়ছে। রাষ্ট্রীয় ঋণের পরিমাণও ক্রমাগত বাড়ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখনো আস্থা খুঁজে পাচ্ছেন না। এগুলো চিন্তার বিষয়।

Facebook Comments Box

Posted ৫:০৫ পিএম | বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।