রবিবার ১৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ব্যালটে ভোট

  |   সোমবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   28 বার পঠিত

আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ব্যালটে ভোট

শেষ পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে এলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর এই নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে ইসি। কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়, ‘ব্যালটে ভোট হলে কেন্দ্র দখল করে ভোটের আগে-পরে ইচ্ছামতো বাক্সে ব্যালট ভর্তি করা সম্ভব।

ইভিএমে এ ধরনের অন্যায় করার কোনো সুযোগ নেই।’ তার আগে ও পরে ইভিএমের পক্ষে প্রচার অব্যাহত রাখে ইসি। এ ক্ষেত্রে বিপক্ষের মতামত আমলে নেওয়া হয়নি; কিন্তু এই মেশিন ব্যবহারে বিপুল অর্থের জোগান না পাওয়ায় গতকাল সোমবার ইসি সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনেই ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। ৩০০ আসনের সবটিতেই ভোট হবে ব্যালটে।

ইসির সভা শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের এই তথ্য জানাতে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ জন্য ইভিএম মেরামতের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে কাছে এক হাজার ২৬০ কোটি টাকা চেয়েছিল ইসি। ওই টাকা পাওয়ায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ব্যালট পেপারে ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোটগ্রহণ হবে।

এর আগে গত ২০ মার্চ নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে কী হবে না হবে, তা জানি না। আমরা অন্ধকারে। আগের কেনা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে এক লাখ ১০ হাজার ইভিএম মেরামত করে ব্যবহারযোগ্য করতে হবে। মেরামতের জন্য এক হাজার ২৬০ কোটি টাকার মতো লাগবে; কিন্তু টাকার নিশ্চয়তা আমরা এখনো পাইনি। টাকার নিশ্চয়তা না পেলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ব্যালটে কতটা করব বা ইভিএমে আদৌ করব কি না—এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। আমরা অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বসে থাকবে পারব না। ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) বলেছে, তাদের ছয় মাস সময় দিতে হবে মেরামত করার জন্য।’

ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, ইভিএম মেরামতের জন্য টাকা চেয়ে গত মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়কে সর্বশেষ যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল তার নেতিবাচক জবাব আসাতেই গতকালের সভায় আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ইসি। কমিশন মনে করে, পুরনো ইভিএমের মধ্যে যেগুলো এখনো পুরোপুরি নষ্ট হয়নি সেগুলো জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার করাটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

নতুন ইভিএম কেনার প্রকল্পও বাতিল হয় অর্থ সংকটে : গত অক্টোবরে নতুন করে ইভিএম কিনতে নির্বাচন কমিশন পরিকল্পনা কমিশনে ‘নির্বাচনীব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব দেয়। এতে দুই লাখ ইভিএম কিনতে ছয় হাজার ৬৬০ কোটি ২৯ লাখ টাকা চায় নির্বাচন কমিশন। এ ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরেই চাওয়া হয় তিন হাজার ৬৬৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই হাজার ৯৯৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে বলে জানায়। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় আট হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা; কিন্তু গত ২৩ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন সচিব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকারের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে সরকার এই প্রকল্প আপাতত প্রক্রিয়াকরণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

কর্মপরিকল্পনায় যা বলা হয় : গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর ইভিএমকে গুরুত্ব দিয়েই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ২০ পাতার ছাপা কর্মপরিকল্পনার তিন পাতাজুড়েই আছে ইভিএমের আলোচনা। এতে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে ইসি তাদের যুক্তি তুলে ধরে বলে, ব্যালটে ভোট হলে কেন্দ্র দখল করে ভোটের আগে-পরে ইচ্ছামতো বাক্সে ব্যালট ভর্তি করা সম্ভব। ইভিএমে এ ধরনের অন্যায় করার কোনো সুযোগ নেই। ইভিএমে ভোট কারচুপি করা সম্ভব—এমন প্রমাণ কেউ উপস্থাপন করতে পারেনি।

কর্মপরিকল্পনায় একাদশ সংসদ নির্বাচন থেকে বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে সুফল পাওয়া গেছে দাবি করে ইসি বলে, সংলাপে অংশ নেওয়া ২৯টি রাজনৈতিক দলের ১৭টি ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে। বিপক্ষে মত দিয়েছে ১২টি দল। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের মত ইভিএমের পক্ষে থাকায় ইভিএম ব্যবহার না করা যুক্তিসংগত হবে না বলে মনে করে কমিশন। এ ছাড়া বলা হয়, কমিশন উভয় পক্ষের মতামতের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে অনূর্ধ্ব ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা যুক্তিসংগত মনে করছে। অবশিষ্ট ১৫০ আসনে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট নেওয়া হবে।

অবশ্য ইসির ১৭টি দল ইভিএমের পক্ষে মত দেওয়ার তথ্যটি সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সবাই স্বীকার করেনি।

বিশেষজ্ঞ মত : নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ইভিএম ব্যবহারে ক্ষেত্রে আর্থিক বিষয়টি যেমন জড়িত, তেমনি রাজনৈতিক সমস্যাও রয়েছে। এটি অন্য দেশগুলোর তুলনায় ব্যয়বহুল। অনেক রাজনৈতিক দল এর বিরুদ্ধে। যে কারণেই হোক, ইভিএম থেকে নির্বাচন কমিশনের সরে আসাটা ইতিবাচক। এর মাধ্যমে কমিশন একভাবে স্বীকার করে নিয়েছে যে তাদের দূরদর্শিতার ঘাটতি ছিল। বাস্তবতাকে আগেই মেনে নিলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ত।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ইভিএম ব্যবহার না করার এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বলেন, শেষ পর্যন্ত ইসি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন ইসির উচিত, সব দলের অংশগ্রহণে পক্ষপাতহীন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে এগিয়ে যাওয়া।

Facebook Comments Box

Posted ১১:০৬ পিএম | সোমবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৩

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(173 বার পঠিত)
ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।