শনিবার ২৫শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

সুন্দর আচরণ: ইসলাম কি বলে?

  |   শুক্রবার, ২৬ অগাস্ট ২০২২   |   প্রিন্ট   |   113 বার পঠিত

ইমান ও ইবাদতের পর সদ্ব্যবহার মানুষের মহৎ গুণ। সুন্দর আচরণ ব্যক্তির চারিত্রিক ভূষণ। এর দ্বারা মানুষের প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয় আমি সচ্চরিত্রের পূর্ণতা দিতে প্রেরিত হয়েছি।’ সহিহ্ বোখারি : ২৭৩

মানুষের একটি স্বভাব হলো সে আপনকে কাঁদায়, পরকে হাসায়। অসহায়-দুর্বলকে অবজ্ঞা করে। এ বাস্তবতায় দেখা যায়, দূরের লোকদের তুলনায় কাছের লোকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার বেশি ঘটে। দুর্বলদের ওপর অত্যাচার বেশি হয়। কারণ তারা প্রতিকারে অক্ষম কিংবা বড় ধরনের ক্ষতি করার মানসিকতা রাখে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করো না। আর সদ্ব্যবহার কর মাতা-পিতার সঙ্গে, নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে, এতিম, মিসকিন, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, মুসাফির এবং মালিকানাধীন দাস-দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক-অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ সুরা আন নিসা : ৩৬

বাবা-মা : বাবা-মার সঙ্গে সদাচারণের বিষয়টি আয়াতে সর্বাগ্রে আনা হয়েছে। কারণ পৃথিবীতে আল্লাহর পর মানুষের ওপর সর্বাপেক্ষা বেশি অনুগ্রহ, ভালোবাসা, শ্রম-সেবা মা-বাবার থাকে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে সুন্দর ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। কারণ তার মা কষ্ট করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে। কষ্ট করে তাকে প্রসব করেছে এবং তাকে গর্ভে ধারণ ও দুধ ছাড়াতে ত্রিশ মাস লেগেছে।’ সুরা আহকাফ : ১৫

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচারণ করো। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয় তাহলে তাদের ‘উফ’ বলো না। ধমক দিয়ো না। বরং তাদের সঙ্গে সম্মান রেখে কথা বল। আর তাদের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা বিছিয়ে দাও এবং বল, ‘হে আমার রব তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমায় লালন-পালন করেছেন।’ সুরা আল ইসরা : ২৩-২৪

হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে আর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে নিহিত আছে।’ জামে তিরমিজি : ১৮৯৯

আত্মীয়-স্বজন : আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার যেমন কাম্য, তেমনি তাদের খোঁজখবর রাখা, বিপদে আপদে সাহায্য করা, সম্পর্ক ঠিক রাখাও গুরুদায়িত্ব। এগুলো তাদের হক। সুরা নাহলের ৯০ নম্বর আয়াতে তাদের হক যথাযথ পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুরা রাদের ২৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘… আল্লাহ যে সম্পর্ক ঠিক রাখতে আদেশ করেছেন তা যারা ছিন্ন করে … তাদের জন্য রয়েছে অভিশাপ এবং মন্দ আবাসস্থল।’ হাদিসে বলা হয়েছে, ‘আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ সহিহ্ বোখারি : ৫৯৮৪

এতিম-মিসকিন : এতিম-মিসকিনদের সঙ্গে সদাচারণ করা, তাদের আদর-সোহাগ দেওয়া, বিপদে-আপদে সাহায্য-সহযোগিতা করা কোরআনের নির্দেশ ও বড় সওয়াবের কাজ। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা আপনাকে এতিম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, আপনি বলুন, তাদের জন্য সুব্যবস্থা করা উত্তম।’ সুরা বাকারা : ২২০

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আমি ও এতিম পালনকারী জান্নাতে তর্জনী ও মধ্যমা অঙুলির দূরত্বে থাকব।’ সহিহ্ বোখারি : ৫৩০৪

প্রতিবেশী : প্রতিবেশী আমাদের প্রিয়জন, উত্তম বন্ধু। দূরের হোক কিংবা কাছের তাদের সঙ্গে মন্দ ব্যবহার কোনোভাবেই কাম্য নয়। সর্বাবস্থায় তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে। তাদের শারীরিক, মানসিক যেকোনো প্রকারের নির্যাতন ও কষ্ট দেওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। হাদিসে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’  সহিহ্ বোখারি : ৫৬৭২

অন্য হাদিসে তিনবার আল্লাহর নামে শপথ করে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘সে মুমিন নয় যার, অনিষ্ট হতে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।’ মিশকাত : ৪৯৬২

বন্ধু-বান্ধব : বর্ণিত আয়াতে ‘আসসাহিবি বিল জানবি’ শব্দদ্বয় ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ পাশের সঙ্গী-সাথী। তারা যে কেউ হতে পারে। বাড়িতে, অফিসে, সফরে কিংবা নিজ জনপদে। তাদের সঙ্গেও প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করতে হবে। আত্মীয়-অনাত্মীয়, মুসলিম-অমুসলিম ইত্যাদির তফাৎ চলবে না।

পথিক : পথিক কিংবা মুসাফিরদের সঙ্গে সদাচারণের অর্থ তারা রাস্তা ভুলে গেলে সঠিক রাস্তা চিনিয়ে দেওয়া। খাবার-পানীয়ের প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা করা। আর্থিক সমস্যা থাকলে তাদের দান-সদকা করা। ইরশাদ হয়েছে- ‘… তোমরা যে সম্পদ ব্যয় করবে তা পিতা-মাতা, আত্মীয়, এতিম-মিসকিন ও মুসাফিরের জন্য।’ সুরা বাকারা : ২১৫

দাস-দাসী : আয়াতে মালিকানাধীন দাস-দাসীর কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে যদিও দাসপ্রথা নেই, তবুও আয়াতের নির্দেশনা যেকোনো চাকর-চাকরানির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা চাই। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তারা তোমাদের ভাই, তোমাদের অনুগামী। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। অতএব যার অধীনে ভাই থাকে, সে যা খায় তা থেকে যেন তাকে খেতে দেয়, যা পরিধান করে তা থেকে যেন তাকে পরতে দেয়। সাধ্যের বাইরে তাদের কোনো কাজ দেবে না, যদি দাও তবে তাদের সাহায্য কর।’ সহিহ্ বোখারি : ২৫৪৫

Facebook Comments Box

Posted ৩:৪৯ পিএম | শুক্রবার, ২৬ অগাস্ট ২০২২

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

গোলাপ গ্রাম
(175 বার পঠিত)
ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।