মঙ্গলবার ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

যে তিন কারণে রাশিয়া ভেঙে যেতে পারে-ম্যাথিউ সাসেক্স

  |   শুক্রবার, ০৪ নভেম্বর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   128 বার পঠিত

রাশিয়ার বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে অনেকে অনেক প্রশ্ন তোলেন। এর মধ্যে একটি অংশের প্রশ্ন হলো, রাশিয়া যেভাবে তার ক্ষুদ্র প্রতিবেশীর কাছে অপমানজনক পরাজয়ের মুখে পড়েছে, তাতে কি রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়ার অস্তিত্ব টিকে থাকবে? আপাতভাবে এই চিন্তা পুরোপুরি উদ্ভট বলে মনে হতে পারে। তিনটি বিষয়ে বড় ধরনের ভুল হিসাব-নিকাশের কারণে ভ্লাদিমির পুতিনের অবস্থান দুর্বল হয়েছে। এগুলো হলো, রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে অন্ধ ধারণা, ইউক্রেনীয়রা নিজেরাই রুশ বাহিনীকে স্বাগত জানাবেন ও পশ্চিমাদের ঐক্যে ফাটল ধরেছে।

রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে এরই মধ্যে যুদ্ধের প্রতিবাদে, পুতিনের নেতৃত্বের বিরোধিতা করে এবং সেনাবাহিনী নিয়োগের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বড় বিক্ষোভ হয়েছে। সেনাবাহিনীর তালিকায় নাম উঠবে কি না, এই ভয়ে এরই মধ্যে অনেকে রাশিয়া ছেড়েছেন। পশ্চিমাদের আরোপ করা বিশাল অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা রাশিয়াতে ভালোভাবেই লেগেছে। কিন্তু মস্কোর দিক থেকে নেওয়া কিছু সৃজনশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কারণে ধাক্কাটা যতটা গভীর হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, তা হয়নি।

প্রকৃতপক্ষে, ইউক্রেন ডার্টি বোমা হামলা চালাতে পারে, এমন মিথ্যা দাবি তুলে মস্কো এখন গলা ফাটিয়ে পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছে। এর মাধ্যমে পুতিন তাঁর শক্তিশালী ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। রাশিয়ার মতো কর্তৃত্ববাদী একটি রাষ্ট্র সম্পর্কে যখন পশ্চিমা কোনো ভাষ্যকার যুক্তি তৈরি করেন, তখন তাঁর মধ্যে একটা ধারণাগত পক্ষপাত কাজ করা স্বাভাবিক। কিন্তু কেউই একটা বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছেন না, ভিয়েতনাম, ইরাক অথবা আফগানিস্তান থেকে লজ্জাজনকভাবে সৈন্য প্রত্যাহারের পর যুক্তরাষ্ট্র ভেঙে পড়েছিল কি না।

এরপরও তিনটি যৌক্তিক কারণ আছে, যাতে ধারণা জন্মে, ইউক্রেনে পরাজিত হলে ক্রেমলিনের রাজনৈতিক দুর্গ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যেতে পারে। মস্কোর শাসকদের জন্য পুরো রাশিয়ার শাসন চালিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে উঠতে পারে।

এর আগেও ভেঙেছে

প্রথম ও সবচেয়ে অনিবার্য বিষয় হচ্ছে, এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। ইতিহাসের বিচারে সেটা তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক কালেই ঘটেছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়েছে। বিশ্বরাজনীতির বিচারে সেটা ভূমিকম্প বলে বিবেচনা করা হয়। সমস্যা হলো, সোভিয়েত ইউনিয়ন যে ধসে পড়বে, সেই ভবিষ্যদ্বাণী আগে থেকে কেউ করতে পারেননি।

প্রকৃতপক্ষে, কট্টরপন্থীদের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের আগপর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্বের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, মিখাইল গর্বাচেভ সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসক হিসেবে থেকে যাবেন। সোভিয়েত বিপর্যয় অনিবার্যভাবেই প্রমাণ করেছে, পশ্চিমাদের ধারণা কতটা অপ্রয়োজনীয়।

নির্ভর করার মতো বিকল্প নেই পুতিনের

রাশিয়ায় রাজনৈতিক ক্ষমতার বিন্যাস এমন যে সেখানে পুতিনের দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই। এটা খুব সুচিন্তিতভাবে করা হয়েছে। পুতিন তাঁর মতো করে একটি রাষ্ট্র নির্মাণ করেছেন। রাশিয়ার সমাজ ও রাষ্ট্রসম্পর্কিত মূল প্রশ্নের সঙ্গে পুতিন নিজেকে অবিচ্ছেদ্য রূপে গড়ে তুলেছেন।

সম্রাটের উপাধি ধারণ না করলেও পুতিন রাশিয়াকে সম্রাটের মতোই পরিচালনা করেন। এর মানে হচ্ছে, তাঁর বদলে দায়িত্ব নিতে পারেন, এমন কোনো উত্তরাধিকার মনোনীত করেননি পুতিন। ক্রেমলিনের নানা উপদল ও গোষ্ঠীকে একত্র রাখতে সক্ষম, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। পরস্পরবিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে একত্র রাখার কাজটা খুব সূক্ষ্মভাবে করতে পেরেছেন পুতিন।

নানা সময়ে পুতিনের উত্তরসূরি হিসেবে সের্গেই কিরিইয়েনকো, নিকোলাই পাট্রোশেভ, সের্গেই সোবাইয়ানিনের নাম শোনা গেছে। কিন্তু তাঁরা হয় পুতিনের বিরক্তির কারণ হয়েছেন, কিংবা এমন কোনো কাজ করছেন, যাতে তাঁদের ওপর পুতিনের আস্থা ভঙ্গ হয়েছে।

জাতিগত উত্তেজনা

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়ার কেন্দ্রে থাকা সুবিধাবাদী রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রান্তে থাকা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা ফাটল সৃষ্টি করেছে। রাশিয়ার অতি ডানপন্থীদের মধ্যে একটি ধারণা বেশ জোরালো যে মস্কো হচ্ছে সভ্যতার তৃতীয় রোম। এর অর্থ হচ্ছে, বর্তমান সভ্যতায় রাশিয়া এমন এক মহাপরাক্রমী শক্তি, যাদের পেছনে ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষ একত্র হবে।

রাশিয়ার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে তুলনামূলকভাবে দারিদ্র্য অনেক বেশি। এ কারণে সামরিক বাহিনীতে এসব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে হতাহতের ঘটনা রাশিয়ার সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী, যেমন দাগিস্তানি, চেচেন, ইনগিস, তুভানসের মধ্যে বেশি হচ্ছে।

ক্রেমলিন নতুন করে অতিরিক্ত তিন লাখ সেনা নিয়োগের ঘোষণা করেছে, তাতেও সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীগুলো থেকে বেশি সেনা নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। মস্কো কিংবা সেন্ট পিটার্সবার্গের বাসিন্দাদের জন্য এই যুদ্ধের আঁচ সামান্যই। কিন্তু রাশিয়ার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলোকে এ যুদ্ধ সরাসরি কামানের গোলার মুখে ছুড়ে দিয়েছে।

রাশিয়া যদি এখন ভাঙতে শুরু করে, তাহলে ভাঙনের শুরু কোথা থেকে হবে? পরিস্থিতিদৃষ্টে মনে হচ্ছে, উত্তর ককেশাস ভাঙনের ভারকেন্দ্র হতে পারে। সেনাবাহিনীতে নতুন নিয়োগ ঘোষণার পর রাশিয়ার যে কয়েকটি অঞ্চলে বিক্ষোভ হয়েছে, তার অন্যতম হলো দাগেস্তান। সেখানে দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে।

এ ছাড়া মনোযোগটা এখন চেচনিয়াতেও কেন্দ্রীভূত হয়েছে। এর আগে দুটি যুদ্ধে (১৯৯৪-৯৬ ও ১৯৯৯-২০০৯) চেচনিয়া রাশিয়া ফেডারেশন থেকে পৃথক হওয়ার চেষ্টা করেছিল। চেচনিয়ার অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা রমজান কাদিরভ। ২০০৭ সালে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনি খুব ভালোভাবেই পুতিনের শক্ত মুঠোর শাসনেই আছেন। কাদিরভ পুতিনের সবচেয়ে জোরালো সমর্থকদের একজন। কিন্তু পুতিনের ভঙ্গুর অবস্থান কাদিরভকে ভিন্ন চিন্তা করতেও উৎসাহিত করছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ছাড়াও মস্কোয় কাদিরভের আরও কয়েকজন বন্ধু রয়েছেন। তিনি এখন রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্ব ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সবচেয়ে বড় সমালোচক।

লেখক: ম্যাথিউ সাসেক্স, ফেলো, স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডিফেন্স স্টাডিজ সেন্টার, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

সূত্র- এশিয়া টাইমস

Facebook Comments Box

Posted ৬:১৩ পিএম | শুক্রবার, ০৪ নভেম্বর ২০২২

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।