মঙ্গলবার ১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বেতন সমন্বয়ের পরামর্শ

  |   রবিবার, ২১ অগাস্ট ২০২২   |   প্রিন্ট   |   120 বার পঠিত

সঠিকভাবে হিসাব করা হলে আগামী মাস থেকে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। তবে এটা খুব বেশি নয় এবং এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মূল্যস্ফীতি এ রকম পর্যায়ে গেলে তাড়াতাড়ি তা মোকাবিলার পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, একটা বেতন সমন্বয়ের উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে বেতন বাড়ানোর চাপে পড়ে যেতে পারে। আজকে চা বাগানের শ্রমিক দিয়ে শুরু হল, কালকে গার্মেন্টস, পরশু দিন সরকারি কর্মচারীদের হবে, পরের দিন সবাই রাস্তায় নামবে।

রবিবার (২১ আগস্ট) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এর সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন চ্যালেঞ্জ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ইআরএফ আয়োজিত এ আলোচনায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক মনসুর বলেন, ইংল্যান্ডের মত দেশে ১০ দশমিক ১ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। সেখানে আমাদের কনটেক্সটে ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি খুব বেশি নয়।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ানো অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হতে পারে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

আলোচনায় তিনি সুদের হার বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার উদাহরণ টানেন। অনেক দেশই এ পন্থা অবলম্বন করছে বলে জানান তিনি। তবে এজন্য বাংলাদেশের কোনো হাতিয়ার নেই মন্তব্য করে আহসান মনসুর বলেন, “কিন্তু আমাদের নয় ছয়ে হাত পা বাঁধা বলে আমরা কিছুই করতে পারছি না।”

দেশে গত কয়েক মাস ধরে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতার পেছনে ‘বিচক্ষণতার অভাবকে’ দায়ি করেন তিনি।

তার মতে, “মুদ্রার মান নির্ভর করবে বাজারের ওপর ভিত্তি করে। বিক্রেতার কাছ থেকে ডলার কিনে আবার ক্রেতার কাছে বিক্রি করবে। এতে বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বাস্তবভিত্তিক নীতি গ্রহণ করতে হবে। বিগত ১৪ বছর ধরে ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গিয়ে সমন্বয় হতে দেওয়া হয়নি। এর ফলে হঠাৎ বেশি বেড়ে গেছে।”

তিনি বলেন, “এখন বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিক করে দিয়েছে ৯৫ টাকা, কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১২ বা ১৩ টাকা। এটা বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে হয়ত এটা ১০৫ টাকায় গিয়ে ঠেকতে পারে।আবার বাংলাদেশের চাহিদা যখন কমে আসবে বা বাজারে যথেষ্ট ডলারের যোগান আসবে তখন হয়ত আবার কিছু কমে আসবে।“

তার যুক্তির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান সুদহার বাড়ানোর পরামর্শের বিপরীত ‍যুক্তি দেন। তিনি উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়েও তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ সুদের হার আরও কমিয়ে সুফল পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

তার মতে, সুদের হার কমিয়ে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে আয় বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করা যায়।

তিনি বলেন, “আমরা সেটাই করছি।“

ডলারের বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তিনি বলেন, “কোভিডের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার বাজার থেকে কিনে ডলারকে স্থিতিশীল রাখার কৃতিত্ব রয়েছে। একইভাবে এখন ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। না হলে দেশের বাজারে ডলারের বিনিময় হার আরও বেশি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারত।”

সঙ্কটের মধ্যেও বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর ‘অসাধারণ ক্ষমতা’ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বিভিন্ন স্থানীয় ও বৈশ্বিক সঙ্কটের মধ্যেও তৈরি পোশাক খাতের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। এসব দুঃসময়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলেই এসব সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৯ লাখের বেশি জনশক্তি বিদেশে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, গত বছর গিয়েছিল সাড়ে তিন লাখের মত। এ কারণে এবছর রেমিট্যান্স বাড়বে এবং চলতি হিসাবে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) সমস্যা হবে না।”

একইসঙ্গে চলতি অর্থবছরে বিনিয়োগ আর বৈদেশিক সহায়তা মিলে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। মূল্যস্ফীতি নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই বলেও মন্তব্য করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান এই অর্থনীতিবিদ।

আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদদের ‘নেতিবাচক’ মনোভাবের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশে খুব দক্ষ।

সাম্প্রতিক একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করে আসছিল আমাদের অর্থনীতিতে সমস্যা আছে। কিন্তু দুদিন আগে আইএমএফ বলল আমাদের অর্থনীতিতে কোনও সমস্যা নেই।“

তার ভাষ্য, “আমাদের অর্থনীতির কোনও সুখবর আমাদের অর্থনীতিবিদরা দিতে পারে না। বাইরের অর্থনীতিবিদদের মুখে আমাদের সুখবর শুনতে হয়। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক, অমর্ত্য সেন কিংবা কৌশিক বসুদের মুখে আমাদের অর্থনীতির সুখবর শুনতে হয়।“

ইআরএফের সভাপতি শারমীন রিনভীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিকেএমইএ এর নির্বাহী সহ সভাপতি মো. হাতেম।

Facebook Comments Box

Posted ৫:৪৬ পিএম | রবিবার, ২১ অগাস্ট ২০২২

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।