| শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট | 22 বার পঠিত
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর দিন (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২) বাংলাদেশে এক ডলারের জন্য লাগত ৮৬ টাকা। আর চলতি বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি এক দিন আগে বাংলাদেশের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এক ডলারের জন্য লেগেছে ১০৭ টাকা। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই এক বছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রার মান কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এক বছরে টাকার এই পরিমাণ অবনমন আর কখনো হয়নি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে; বলা যায়, বেশ ভালোভাবেই পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়ার প্রবণতা ছিল। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এই দুয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। গত ২৯ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমানো হলেও বাজারে তার প্রভাব ছিল না বললেই চলে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। জ্বালানি তেলের দাম ৫০ শতাংশের মতো বৃদ্ধি করার কারণে আগস্টে তা এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠে যায়। সেপ্টেম্বরে অবশ্য তা কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে নেমে আসে। অক্টোবরে তা আরো কমে ৯ শতাংশের নিচে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশে নেমে আসে। নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি হয় ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা কমে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশে নেমে এসেছে। সবশেষ চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে তা আরো কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে আমদানিব্যয়। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, চলে পুরো অর্থবছর; মোট বিক্রি করা হয় ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক; গড়েছে রেকর্ড। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ৮ মাসে ১০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় দর ধরে রাখতে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময় রিজার্ভ যে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল, তাতে ডলার কেনার অবদান ছিল।
বৃহস্পতিবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। এক বছর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রিজার্ভ ছিল ৪৫ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে ১৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ডলারের অস্থির বাজারই আসলে আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। এক লাফে টাকার ২৫ শতাংশ অবনমন ধারণ করার মতো ক্ষমতা আমাদের অর্থনীতির ছিল না। আমরা সবচেয়ে বড় যে ভুলটা করেছি, সেটা হলো দুই বছরের বেশি সময় আমরা টাকা-ডলারের বিনিময় হার ৮৪ টাকায় আটকে রেখেছিলাম। সেটা না করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো ধীরে ধীরে যদি আমরা আমাদের টাকার মান কমাতাম, তাহলে এত বড় ধাক্কা লাগত না।’
আহসান মনসুর বলেন, ‘আশার কথা হচ্ছে, অল্প সময়ের মধ্যে আমরা আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তিটা পেয়ে গেছি। তবে তারা যেসব সংস্কারের কথা বলেছে, সেগুলো কিন্তু চালিয়ে যেতে হবে, না হলে পরবর্তী কিস্তিগুলো আটকে যেতে পারে। একই সঙ্গে সংকট কাটাতে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ অন্যান্য দাতা সংস্থার কাছ থেকে যে ঋণ চাওয়া হয়েছে সেগুলো পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সে যে ইতিবাচক ধারা চলছে তা ধরে রাখতে হবে। তাহলে আমাদের রিজার্ভের ওপর চাপটা আর বেশি পড়বে না। করোনা মহামারির মতো যুদ্ধের ধাক্কা মোকাবিলা করে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’
Posted ১২:২৬ এএম | শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।