| রবিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২২ | প্রিন্ট | 148 বার পঠিত
মহররম চান্দ্রবছরের প্রথম মাস। সম্মানিত চার মাসের তৃতীয় মাস। হাদিসে এ মাসের অনেক ফজিলতের কথা উল্লিখিত হয়েছে। এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা ও তওবা-ইস্তেগফারের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে বান্দার উচিত বছরের সব দিনেই তওবা-ইস্তেগফারের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। বিশেষ করে এই মাসের প্রতি দিনেই ইস্তেগফারের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। আর আশুরার দিন অনেক বেশি ইস্তেগফার করবে। ইস্তেগফারের জন্য সবচেয়ে উত্তম হলো কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত ইস্তেগফার বিষয়ক দোয়াগুলোর মাধ্যমে রাব্বে করিমের দরবারে ক্ষমাপ্রার্থনা করা। তবে নিজের ভাষায় নিজের মতো করে ইস্তেগফার করলেও ঠিক আছে। কারণ মহান আল্লাহ সব ভাষার স্রষ্টা। তিনি সবার কথা বোঝেন, সবার আরজি কবুল করেন।
মনে রাখতে হবে, ইস্তেগফারের প্রাণ হলো তওবা। আর তওবার হাকিকত (প্রকৃত অবস্থা) হলো মানুষ আল্লাহর নাফরমানি (অবাধ্যতা) ছেড়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে। পেছনের অন্যায়গুলোর কাফফারা আদায় করবে। যেখানে যে কাফফারার কথা বলা হয়েছে, সেখানে তা আদায় করবে। বিশেষ করে মানুষের কোনো হক নষ্ট হয়ে থাকলে সেগুলো আদায়ের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে।
ইস্তেগফারের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ্ধতি হলো কোরআনে করিম কিংবা হাদিস শরিফে যে আমল ও ইবাদতের প্রসঙ্গে মাগফিরাতের ওয়াদা করা হয়েছে সেগুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দেবে। প্রত্যেক মুমিনের মন-মস্তিষ্কে সেই আমলগুলোর একটি তালিকা থাকা উচিত। এই তালিকায় সর্বপ্রথম রয়েছে ফরজ নামাজ ও অন্যান্য ফরজ ইবাদত। এরপর মাগফিরাত পাওয়ার আমলগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কবিরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। তাছাড়া দান-সদকা, জিকির-আজকার ও অন্য নফল ইবাদতগুলো তো রয়েছেই।
জিকির ও দোয়ার মধ্যে সবচেয়ে বরকতপূর্ণ আমল হলো দরুদ শরিফ। এটি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফায়াত এবং আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। দৈনিক কমপক্ষে দুই বেলা দরুদ শরিফের আমল জারি রাখা। সেটি দশবার দশবার করেও হতে পারে। একেবারে না হওয়ার চেয়ে এটিও ভালো।
মহররমের দশ তারিখকে আশুরা বলা হয়। আশুরার দিন রোজা রাখা মোস্তাহাব। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কা মোকাররমে ছিলেন, তখনও আশুরার দিন রোজা রাখতেন। এরপর যখন মদিনা মোনাওয়ারায় গেলেন তখন নিজেও রোজা রাখতেন অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। তাছাড়া রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে এই রোজা ফরজ ছিল। যখন রমজানের রোজা ফরজ হলো তখন আশুরার রোজা কেবল নফল রোজা হিসেবে নির্ধারিত হলো। তবে সাধারণ নফল রোজার চেয়ে আশুরার রোজার গুরুত্ব বেশি। হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আশুরার রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর কাছে আমার আশা, তিনি এই রোজার মাধ্যমে বিগত এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।মুসলিম : ১১৬২
হাদিস শরিফ থেকে আশুরা সম্পর্কে আমরা এই হেদায়েতও পাই যে, আশুরার সঙ্গে ৯ মহররমের রোজা রাখা ভালো। বরং আশুরার সঙ্গে যদি ৯ বা ১১ মহররমে রোজা রাখা যায় তাহলে আরও ভালো।
হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের প্রায় ৫০ বছর পর ৬১ হিজরির ১০ মহররমে কারবালায় হজরত হুসাইন (রা)-এর শাহাদতের ঘটনা ঘটে। নিঃসন্দেহে তার শাহাদত তার উঁচু মাকাম ও উচ্চ মর্যাদার বিষয়। কিন্তু উম্মতের জন্য তা হয়ে গেছে অনেক বড় পরীক্ষা ও মুসিবতের বিষয়। ওই ঘটনা মানুষ ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারে না।
তবে স্মরণ রাখতে হবে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের আগেই আমাদের শরিয়ত পূর্ণ হয়ে গেছে। কিয়ামত পর্যন্ত এই শরিয়ত পূর্ণাঙ্গরূপেই সংরক্ষিত থাকবে। মহান আল্লাহ নিজে এই শরিয়ত, শরিয়তের দলিল ও দলিলের উৎসসমূহ হেফাজত করার ঘোষণা দিয়েছেন। সে জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর এখন আর এই শরিয়তের কোনো হুকুম মানসুখ (রহিত) হওয়ার অবকাশ নেই। এই শরিয়ত যেভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, আজ পর্যন্ত সেভাবেই সংরক্ষিত আছে। সে অনুযায়ীই সবার আমল জরুরি। তাতে কোনো ধরনের সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ নেই। অতএব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পরে সংঘটিত কোনো মুসিবত বা আনন্দের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো দিন বা কোনো মাসের নতুন কোনো ফজিলত বা নতুন কোনো বিধান আবিষ্কার করা যাবে না। এমন করা হলে তা হবে পরিষ্কার বেদআত ও গোমরাহি, যার ঠিকানা জাহান্নাম।
Posted ৪:০৭ পিএম | রবিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২২
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।