নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫ | প্রিন্ট | 149 বার পঠিত
বহু বছর ধরেই পরিবেশবিদেরা ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছ লাগানোর বিপদের কথা বলে আসছিলেন। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদেরও কেউ কেউ সহমত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তাঁরা সেটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেননি।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার সরকারি–বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছের চারা তৈরি, রোপণ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানাই। ১৫ মে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূরণে এ দুটি প্রজাতির গাছের চারা তৈরি, রোপণ এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাসগাছের প্রভাব খুবই গভীর ও বহুমাত্রিক।
ইউক্যালিপটাসগাছ মাটির গভীর থেকে বিপুল পরিমাণ পানি শোষণ করে নেয়। ফলে আশপাশের মাটি শুষ্ক হয়ে পড়ে, যা কৃষিকাজ এবং অন্য উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর। শুধু তা–ই নয়, এই গাছের মূল ও পাতা থেকে নির্গত বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আশপাশের গাছগুলোর বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে ও মাটির উর্বরতা কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে আকাশমণিগাছ খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে ও আশপাশের গাছগুলোকে স্থান, আলো ও পুষ্টি উপাদান থেকে বঞ্চিত করে। এর ফলে অন্যান্য দেশীয় উদ্ভিদ বিকাশে বাধা পায় ও জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায়। পাখি, পোকামাকড় এমনকি ক্ষুদ্র প্রাণিকুল এই গাছে বাসা বাঁধে না। আকাশমণিগাছের ফুলের রেণু বাতাসে মিশে মানুষের শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।
একসময় বাংলাদেশে প্রায় ৫ হাজার প্রজাতির বৃক্ষ ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণার পর ৩ হাজার ৮৩২টি পর্যন্ত রেকর্ড করা গেছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বিবিসিকে বলছেন, বিদেশি এসব গাছ ও গুল্মের ক্রমাগত বর্ধনের ফলে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে গেছে অন্তত এক হাজার দেশীয় প্রজাতির গাছ। গাছপালা, পশুপাখি, প্রকৃতি—সব মিলিয়ে বাংলাদেশের আদি যে ইকোসিস্টেম ছিল, সেটা ভেঙে গেছে।
তবে বিদেশি গাছ লাগানো ও বিক্রি বন্ধ করলেই পরিবেশের সুরক্ষা হবে না। দেশীয় বনজ, ঔষধি ও ফুল ও ফলের গাছ যেমন আম, শাল, নিম, পলাশ প্রভৃতি গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিবছর মহাসমারোহে বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ বা পক্ষ পালন করা হয়। এ সময় স্কুল, কলেজ, সরকারি–বেসরকারি অফিস ও বসতবাড়ির আশপাশে গাছ লাগানো হয়। কিন্তু সেই গাছ পরবর্তী সময়ে পরিচর্যার অভাবে মারা যায়। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের যেমন তদারকির প্রয়োজন, তেমনি সচেতন থাকতে হবে সর্বস্তরের মানুষকেও। বিশেষ করে নার্সারিগুলো যাতে ক্ষতিকর বিদেশি গাছের চারা বিক্রি করতে না পারে, সে বিষয়েও নজরদারি বাড়াতে হবে।
অনেক আগেই ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির রোপণ ও বিপণন বন্ধ করা প্রয়োজন ছিল। বিলম্বে হলেও সরকারের এই সিদ্ধান্ত পরিবেশ তথা জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে আশা করা যায়। তবে ইউক্যালিপটাসগাছ রোপণ ও বিপণন বন্ধ করার অর্থ এই নয় যে বর্তমানে উদ্যান, রাস্তার পাশে বা অন্যত্র থাকা এসব গাছ এখনই কেটে ফেলতে হবে। দেশীয় জাতের নতুন গাছ ব্যাপক সংখ্যায় লাগানোর পরই এগুলো কাটা যেতে পারে।
Posted ৭:১৪ পিএম | শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।