| সোমবার, ০৬ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট | 18 বার পঠিত
বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা হাতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১৬০ দেশ ভ্রমণের রেকর্ড গড়েছেন নাজমুন নাহার। বিশ্ব ভ্রমণে বাংলাদেশের পতাকাবাহী নাজমুন নাহার বিশ্ব মানচিত্রে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে ইতিহাস গড়ছেন। সকল বাধা বিঘ্নকে অতিক্রম করে নারীর অগ্রযাত্রায় আজো যারা অবদান রাখছেন তাদেরই একজন আমাদের গর্বিত নারী নাজমুন নাহার।
পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ একাকী সড়ক পথে ভ্রমণ করেছেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ নাজমুন নাহার ১৬০তম দেশ হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পূর্ণভূমি সৌদি আরবের মাটিতে পা রাখেন। এরই মধ্যে তিনি দেশটির বিভিন্ন শহর রিয়াদ, জেদ্দা ও মক্কা সফর করেন এবং ওমরাহ পালন করেন। তারপর নিজ দেশের মাটিতে ফিরে আসেন। তিনি বিশ্ব শান্তির বার্তা ও পরিবেশ সচেতনতায় তরুণ ও শিশুদের উৎসাহিত করেন।
দেশে ফিরেই ২৪ ফেব্রুয়ারি রোটার্যাক্ট দক্ষিণ এশিয়া সম্মেলনে নাজমুন নাহার দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৪৫০ জন প্রতিনিধির সামনে তার বিশ্ব ভ্রমণের সাহসিকতার গল্প তুলে ধরেন। নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকাকে বহন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী তরুণদের উৎসাহিত করার জন্য এই সম্মেলনে সকল প্রতিনিধিদের সামনে রোটেশিয়ার পক্ষ থেকে নাজমুন নাহারকে বিশেষ সম্মাননা “রোটেশিয়া লেজেন্ডস এওয়ার্ড” দেওয়া হয়। বন- জঙ্গল, পর্বতমালা, মহাসমুদ্র, মরুভূমির লাখ লাখ মাইল একাকী পাড়ি দিয়ে আসা তার বিশ্ব ভ্রমণের এই অভিযাত্রাকে অভিনন্দিত করেন এশিয়া থেকে আসা সকল প্রতিনিধিরা।
২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশন আয়োজিত ‘মিট দ্য সেলিব্রেটি’ সেশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সারাদেশ থেকে আগত তরুণ ডিবেটারদের উৎসাহিত করেন। ৩ মার্চ নাজমুন নাহার বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের আমন্ত্রিত স্পিকার হিসেবে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সপ্তম ডিভিশনাল রেড ক্রিসেন্ট ক্যাম্পে সারা বাংলাদেশ থেকে আগত সকল ইয়ুথ ভলেন্টিয়ারদের বিশ্ব ভ্রমণের সংগ্রাম সাফল্য এবং অর্জনের কথা তুলে ধরার মাধ্যমে সকল তরুণদের আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন।
২০০০ সালে ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল এডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নাজমুন নাহারের প্রথম বিশ্ব ভ্রমণ অভিযাত্রা শুরু হয়। ২০১৮ সালের ১ জুন ১০০তম দেশ দেশ ভ্রমণের রেকর্ড সৃষ্টি করেন জিম্বাবুয়েতে। তারপর, ৬ অক্টোবর ২০২১ বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে বিশ্বভ্রমণের এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক সৃষ্টি করেন আফ্রিকার দেশ সাওটোমে ও প্রিন্সিপ ভ্রমণের মাধ্যমে।
যেখানেই গিয়েছেন বলাদেশের পতাকার পাশাপাশি তিনি উঁচু করে ধরেছেন বিশ্ব শান্তির বার্তা- ‘নো ওয়ার, অনলি পিস’। নাজমুন নাহার তার ভ্রমণের সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোকাল কমিউনিটি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিজিট করেন। সেখানেই তিনি বিশ্ব শান্তি ও পরিবেশ সচেতনতায় নারী, শিশু ও তরুণদের উৎসাহিত করেন।
তার বিশ্ব ভ্রমণ এতটা সহজ ছিল না। বিশ্ব ভ্রমণ করার জন্য তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। দীর্ঘ ২২ বছরের অভিযাত্রায় নাজমুন অনেক কঠিন-দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছেন। অনেক কঠিন পরিস্থিতিসহ মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার। তবুও থামেনি তার পদযাত্রা। তিনি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়েও বাংলাদেশের পতাককে নিয়ে যাচ্ছেন তার বিশ্ব অভিযাত্রার সাথে সাথে। বাংলাদেশের পতাকা হাতেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, রাষ্ট্রপ্রধান, বিখ্যাত ব্যক্তিরা তাকে সংবর্ধিত করেছেন।
পিস টর্চ বিয়ারার অ্যাওয়ার্ডসহ দেশ ও বিদেশে ৫৫টিরও বেশি সম্মাননা অর্জন করেছেন। নাজমুন নাহার সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেন। তার জন্মস্থান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর সদরে। নাজমুন নাহারের লক্ষ্য বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে তিনি বিশ্বের প্রতিটি দেশে ভ্রমণ করবেন। বেগম রোকেয়া, প্রীতিলতাসহ এদেশের আলোকিত নারীরা যুগে যুগে পথ দেখিয়েছেন পিছিয়ে পড়া নারীদেরকে। তাদেরই মত নাজমুন নাহার এই প্রজন্মের নারীদের সামনে এগিয়ে চলার দারুণ উৎসাহ যোগাচ্ছেন তার বিশ্ব ভ্রমণ অভিযাত্রার মাধ্যমে। তার অর্জনের আলো ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়। বাংলাদেশের মানুষ আরও গর্ব করুক আমাদের নাজমুন নাহারকে নিয়ে।
Posted ১০:২৫ এএম | সোমবার, ০৬ মার্চ ২০২৩
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।