| মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট | 21 বার পঠিত
নয়াদিল্লিতে ৯-১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ‘অতিথি দেশ’ হিসেবে অংশ নেবে বাংলাদেশ। আয়োজক দেশ ভারত দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রতিবেশী বন্ধু দেশের কাছ থেকে পাওয়া এ আমন্ত্রণকে ‘বড় সম্মান’ হিসেবে দেখছে সরকার। গতকাল সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন।
এই সম্মেলনে অতিথি হিসেবে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী সেপ্টেম্বরে ভারতে যাবেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চলতি বছর ভারত জি-২০-এর সভাপতি। দেশটি এবার একটি ইউনিক কাজ করেছে, তারা সাউথ সাউথের মতামত নেওয়ার জন্য জি-২০-এর সদস্য নয়, এমন ৯টি দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া থেকে একমাত্র বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমাদের জন্য এটি একটি বড় সম্মান।
আগামী ১-২ মার্চ দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে ড. মোমেন অংশ নেবেন। তিনি বলেন, জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা এমন একটি ফোরামে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি, যেখানে আমাদের সব বন্ধু ও উন্নয়ন অংশীদাররা থাকবেন। আমরা তাদের নানা বিষয় জানতে পারব। একই সঙ্গে আমাদের ইস্যুগুলোও তুলে ধরতে পারব।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন ঘিরে একাধিক ইস্যুতে ভারতের বিভিন্ন স্থানে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২৫০টি বৈঠক হবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন বৈঠকে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন ও ঢাকা থেকে কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন।
দুই দেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে হাসিনা-মোদির বৈঠক : ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’—এ স্লোগানকে সামনে রেখে এবারের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, মোদির মর্যাদাপূর্ণ আমন্ত্রণে এ গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে অংশ নিতে আগামী সেপ্টেম্বরে দিল্লি সফরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এ সফরে গেলে দিল্লির বহুপক্ষীয় জি-২০ সম্মেলনের সাইডলাইনে দুই দেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে দুই প্রধানমন্ত্রীর শেষ সাক্ষাৎ ও শেষ বৈঠক হবে। যদিও প্রতিবছরের মতো এবারও সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। তবু দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় বৈঠককে ঘিরে প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই দেশ। জানা গেছে, হাসিনা-মোদি বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এরই মধ্যে বিভিন্ন সময়ে গৃহীত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন গুরুত্ব পাবে। দুই দেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দুই নেতার একান্ত আলাপ হওয়াও অস্বাভাবিক নয়।
এদিকে, সম্প্রতি এ সম্মেলনকে সামনে রেখে ‘ভয়েস অব দ্য সামিট ২০২৩’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা ও জ্বালানি সংকট নিরসনে জি-২০ নেতাদের সম্মিলিতভাবে ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি কভিড-পরবর্তী ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক সংকট, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, অবকাঠামো উন্নয়ন, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সহযোগিতা জোরদারে গুরুত্ব দেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধিরাও অগ্রাধিকারের এ বিষয়গুলো বিভিন্ন বৈঠকে তুলে ধরছেন বলে জানা গেছে।
বন্ধুত্বের পাশাপাশি সক্ষমতার প্রতিফলন : বাংলাদেশ অতিথি দেশ হিসেবে জি-২০-তে আমন্ত্রিত হওয়ায় এটি স্পষ্ট যে, ভারতের আস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। সামনের দিনে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীকে সঙ্গে নিয়েই চলতে চায় ভারত। মর্যাদাপূর্ণ এ আমন্ত্রণে বন্ধুত্বের প্রতিফলনের পাশাপাশি স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের সক্ষমতারও প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সেপ্টেম্বরের জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করবে বলে মনে করছেন ঢাকার কর্মকর্তারা। তাদের মতে, ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হবে। তার আগে সব উন্নয়ন অংশীদারের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে উন্নত বিশ্বের চিন্তাভাবনা জানা ও নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরার মাধ্যমে একটি বোঝাপড়ার ক্ষেত্র তৈরির সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে বিভিন্ন দেশের অবস্থান ও ব্যাখ্যা জানতে পারবে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে, মর্যাদাপূর্ণ এ প্ল্যাটফর্মে একসঙ্গে বসবে বিশ্বের শক্তিধর দেশ ভারত, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র, যাদের সঙ্গে ভারসাম্যের সম্পর্ক রক্ষায় বাংলাদেশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে নানা ইস্যুতে এ ভারসাম্যের সম্পর্ক ধরে রাখা আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন খোদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাই বহুপক্ষীয় সম্মেলনটিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও ঝালাই করে নেওয়ারও সুযোগ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জি-২০ সম্মেলনে অতিথি হিসেবে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের জন্য বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশ হওয়ার এক অনন্য সুযোগ বলে মনে করেন জি-২০ সম্মেলনের প্রধান সমন্বয়কারী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। বাংলাদেশে ভারতের সাবেক এ হাইকমিশনার ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিবও ছিলেন। তিনি বরাবরই বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জি-২০ সম্মেলনেও বাংলাদেশকে আমন্ত্রণের নেপথ্যেও তার ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশের জি-২০ সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি দেশ হিসেবে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে শ্রিংলা কালবেলাকে বলেন, জি-২০-এর সভাপতি হওয়া যেমন ভারতের জন্য বড় সুযোগ, তেমনি প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশসহ সব উন্নয়নশীল দেশের জন্যও এতে অংশ নেওয়া বিশাল সুযোগ। অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রিত ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বাংলাদেশকে খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি সংকট, জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলা, নারীর ক্ষমতায়নসহ সব বৈশ্বিক ইস্যুতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ হওয়ার এক অনন্য সুযোগ করে দিয়েছে ভারত।
জি-২০ সদস্য যারা : বিশ্বের ১৯ ধনী দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিলে গঠন করেছে জি-২০ জোট। সদস্য দেশগুলো হলো ভারত, চীন, জাপান, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক এবং আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
আমন্ত্রিত ৯ অতিথি দেশ : বাংলাদেশ ছাড়াও জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়েছে মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
Posted ৯:৫৫ এএম | মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।