মঙ্গলবার ২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

ক্যানসার কি? চিকিৎসায় ক্যানসার সেরে যায়

  |   শনিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   22 বার পঠিত

ক্যানসার <strong>কি</strong>? চিকিৎসায় ক্যানসার সেরে যায়

মানবসভ্যতার প্রধানতম শত্রুদের একটির নাম ক্যানসার। এই মরণব্যাধির প্রতিরোধ ও চিকিৎসা এখন স্বাস্থ্য খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্যানসারের রোগীদের বেশির ভাগই বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ১২ লাখ ক্যানসারের রোগী রয়েছেন। প্রতিবছর দুই লাখ মানুষ এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হন এবং দেড় লাখ রোগী প্রাণ হারান। সচেতনতা ও শিক্ষার অভাব এবং অর্থনৈতিক অবস্থা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ক্যানসার ও এ রোগে মৃত্যুর হার বৃদ্ধির মূল কারণ। ক্যানসার সম্পর্কে জরুরি কিছু তথ্য জেনে নিন-

ক্যানসার কি?

ক্যানসার এক ধরনের অসংক্রামক ব্যাধি। এতে আক্রান্ত রোগীর শরীরে অস্বাভাবিক এবং অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন ও বৃদ্ধি ঘটে থাকে। আমাদের শরীরে কোষ বিভাজনের উদ্দেশ্য হলো মাতৃকোষ থেকে নতুন কোষ সৃষ্টি করা। এর মাধ্যমে শরীরের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ ও দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত হয়। শরীরে একদিকে যেমন কোষ বিভাজনের ব্যবস্থা রয়েছে, অন্যদিকে রয়েছে সেই কোষকে নিয়ন্ত্রণে রাখারও বন্দোবস্ত। কোনো কারণে এই নিয়ন্ত্রণব্যবস্থায় ত্রুটি দেখা দিলে শরীরে অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন হতে থাকে। তখন শরীরে নানা ধরনের যে প্রতিক্রিয়া ও শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়; সেটিই ক্যানসার বা কর্কট রোগ।

কোনো ক্যানসার একক রোগ?

অনেকেই ক্যানসার বলতে বিশেষ একটি রোগ মনে করলেও এটি কোনো একক রোগ নয়, বরং সমষ্টিগত রোগের একক সাধারণ নাম। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও কোষে ক্যানসার হতে পারে। একেক রকম ক্যানসারের ধরন, কারণ ও উপসর্গ একেক রকমের হয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি, চিকিৎসা, রোগের ভয়াবহতা ও পরিণতিও ভিন্ন ভিন্ন।

বাংলাদেশে পুরুষদের মধ্যে ফুসফুস, প্রস্টেট, মুখগহ্বর, মলাশয়সংক্রান্ত বা কলোরেক্টাল, পাকস্থলী ও লিভার ক্যানসারের হার বেশি। আর নারীদের মধ্যে জরায়ুমুখ, স্তন, মুখগহ্বর ও থাইরয়েডের ক্যানসার বেশি হয়ে থাকে। ক্যানসারের ভয়াবহতা নির্ভর করে এর ধরন এবং কতটুকু ছড়িয়েছে তার ওপর।

লক্ষণ বা উপসর্গসমূহ কী কী?

যেহেতু ক্যানসার কোনো একক রোগ নয় তাই এর লক্ষণও বিভিন্ন ক্যানসারভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে সামষ্টিকভাবে কিছু লক্ষণকে ক্যানসারের সাধারণ বিপদসংকেত হিসেবে ধরে নেয়া হয়। সেগুলো হলো-

কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই হঠাৎ শরীরের ওজন কমতে শুরু করা, রক্তস্বল্পতা ও ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া এবং অস্বাভাবিক দুর্বলতা। মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন হওয়া। যেমন- কিছুদিন ডায়রিয়া, আবার কিছুদিন কোষ্ঠকাঠিন্য। বেশ কিছুদিন ধরে (দুই সপ্তাহের বেশি) জ্বর হয়েছে, কিন্তু সেটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য সাধারণ চিকিৎসায় সারছে না। খুসখুসে কাশি হয়েছে অথচ পুরোপুরি সারছে না। শরীরের কোথাও কোনো পিণ্ড বা চাকার উপস্থিতি অনুভব হচ্ছে। ভাঙা কণ্ঠস্বর যা কোনো চিকিৎসায় ঠিক হচ্ছে না। শরীরের একাধিক স্থানে তিল বা আঁচিলের সুস্পষ্ট পরিবর্তন। শরীরের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ।

উল্লিখিত লক্ষণগুলো দেখলে সতর্ক হয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রোগের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। মনে রাখতে হবে, ওপরের লক্ষণগুলো সতর্কসংকেত মাত্র। তবে এসব লক্ষণ থাকলেই ক্যানসার- এমনটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না।

ক্যানসার কেন হয়?

ক্যানসারের সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বেশ কিছু বিষয়কে ক্যানসারের সম্ভাব্য কারণ বা ফ্যাক্টর বলে ধরে নেয়া হয়। এগুলোকে ক্যানসারের উদ্দীপকও বলা হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ক্যানসারের উদ্দীপককে বলে কারসিনোজেন। এসবের মধ্যে রয়েছে রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ও অতিবেগুণি রশ্মি বা আল্ট্রাভায়োলেট রে। আরও আছে কৃত্রিম রং, কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য, বেনজিনজাতীয় রাসায়নিক উপাদান, এসবেসটস, কীটনাশক, বায়ুদূষণ, আফ্লাটক্সিন ইত্যাদি। কিছু জীবাণু যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, হার্পিস ভাইরাস, এইচআইভি, এইচ পাইলরি ইত্যাদিও ক্যানসারের জন্য দায়ী। পাশাপাশি তামাক, অ্যালকোহল, ভেজাল খাবার ও খাবারের প্রিজারভেটিভ এবং উচ্চ ক্যালরিযুক্ত, অস্বাস্থ্যকর ও ট্রান্সফ্যাট যুক্ত খাবার (যেমন ফাস্টফুড) থেকেও ক্যানসার হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ওজন ও শারীরিক পরিশ্রমবিমুখ জীবনযাপনকেও ক্যানসারের জন্য দায়ী করেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিরোধের উপায়

ক্যানসার প্রতিরোধে কিছু অভ্যাস রপ্ত করে নিতে হবে। এর মধ্যে নিয়মিত ব্যায়াম ও কায়িক বা শারীরিক পরিশ্রম ও পরিমিত স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ অত্যাবশ্যক। নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত যৌন অভ্যাস নিশ্চিত করতে হবে। শাকসবজি, ফলমূল ও বিভিন্ন ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। অধিক ক্যালরি, ফ্যাটযুক্ত খাবার, ধূমপান, তামাক ও মদ্যপান পরিহার করতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও নিয়ম অনুযায়ী ক্যানসার স্ক্রিনিং এবং হেপাটাইটিসের টিকা বা ভ্যাকসিন নিতে হবে। সময়মতো এবং বিপদসংকেত দেখামাত্র দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

চিকিৎসায় বড় বাধা

ক্যানসার চিকিৎসার সবচেয়ে বড় বাধা হলো সঠিক সময়ে রোগটি নির্ণয় না হওয়া। ক্যানসার যদি বেশি ছড়িয়ে পড়ে, চিকিৎসায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। চিকিৎসা সম্পর্কে অহেতুক ভীতি ও সচেতনতার অভাবও একটি বড় সমস্যা।

ক্যানসারের চিকিৎসা মূলত সার্জারি, কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি। প্রায় সব ধরনের ক্যানসারেই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এই চিকিৎসাগুলো দেয়া হয়। কখনো একটি, কখনো একাধিক চিকিৎসা পালা করে চলে। তবে দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসা করতে হয়। এসব চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলক বেশি। আর চিকিৎসার খরচও সাধারণ চিকিৎসার চেয়ে বেশি। চিকিৎসার এই উচ্চব্যয় ছাড়াও অপচিকিৎসার দৌরাত্ম্য ক্যানসারের রোগীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ক্যানসার পুরোপুরি সারে না, এমন ধারণা অনেকের মধ্যেই আছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- শুরুতেই যদি ক্যানসার শনাক্ত করা যায়, তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসায় রোগটি সেরে যায়।

আমরা করব জয়

বিশ্বে প্রতিবছর ৮০ লাখ থেকে এক কোটি মানুষ মারা যান নানা ধরনের ক্যানসারে। প্রতিরোধব্যবস্থা না নিলে এটি দ্বিগুণ হবে ২০৩০ সালের মধ্যে। প্রতিবছর বিশ্বে ক্যানসারে যত মানুষ মারা যান তার এক-তৃতীয়াংশ প্রতিরোধ করা সম্ভব। পৃথিবীতে তামাক না থাকলে ৭১ শতাংশ ফুসফুসের ক্যানসার এবং ২২ শতাংশ অন্যান্য ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো। তাই প্রতিরোধই হওয়া উচিত ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রধান পদক্ষেপ।

সঙ্গে ক্যানসারের চিকিৎসায় মনোবল ধরে রাখা খুব জরুরি। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা বলে অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তাই ক্যানসার রোগীকে মানসিক সহায়তা প্রদান অত্যন্ত জরুরি। প্রতিরোধ ও শুরুতেই ক্যানসার নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও সামাজিক সচেতনতা জরুরি।

রাষ্ট্র, সংস্থা ও ব্যক্তির উদ্যোগই পারে ক্যানসারের চিকিৎসাসেবার বৈষম্য দূর করতে। ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে প্রতিবছর পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যানসার দিবস। ২০০০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্যারিসে বিশ্ব ক্যানসার সম্মেলনে দিনটিকে বিশ্ব ক্যানসার দিবস বা বিশ্ব ক্যানসার সচেতনতা দিবস বা বিশ্ব ক্যানসার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর পর থেকে প্রতিবছর নিয়মিত পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়ে আসছে নানা আয়োজনে। এ বছর ক্যানসার দিবসের প্রতিপাদ্য: ক্যানসার পরিচর্যায় বৈষম্য দূর করি। ২০২২ সাল থেকে তিন বছরের জন্য এই প্রতিপাদ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

Facebook Comments Box

Posted ১:১০ এএম | শনিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।