| বৃহস্পতিবার, ০৯ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট | 89 বার পঠিত
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে কল্যাণ অর্থনীতির জনক বলা হয়। দুর্ভিক্ষ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব, জনকল্যাণ অর্থনীতি ও গণদারিদ্রের অন্তর্নিহিত কার্যকারণ বিষয় নিয়ে গবেষণার জন্য পৃথিবী জুড়েই তিনি শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন। অমর্ত্য সেন অর্থনীতির বিষয়ে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে “নোবেল পুরস্কার “ লাভ করেন। এরপরে, ১৯৯৯ সালে অমর্ত্য সেনকে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার “ভারতরত্ন” পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
অমর্ত্য সেনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৩ নভেম্বর শান্তিনিকেতনে নানা ক্ষিতিমোহন সেনের পর্ণকুটীরে। তার আদি নিবাস বর্তমান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মানিকগঞ্জে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নাম রেখেছিলেন অমর্ত্য, যার অর্থ অমর বা অবিনশ্বর। অমর্ত্য সেন একটি সম্ভান্ত্র বৈদ্যব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার নানা আচার্য ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের একজন পণ্ডিত এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহযোগী। এছাড়া, তিনি সংস্কৃত ভাষার অধ্যাপক এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্যও ছিলেন। অমর্ত্য সেনের বাবা আধ্যাপক আশুতোষ সেন এবং মা অমিতা সেন। দু’জনই ঢাকার মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। আশুতোষ সেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তার মা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবেও কিছুদিন কাজ করেছিলেন।
১৯৪১ সালে অমর্ত্য সেন তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন ঢাকার সেইন্ট গ্রেগরী উচ্চ বিদ্যালয়ে। বাবা আশুতোষ সেন ১৯৪৫ সালে পরিবার নিয়ে পাকাপাকিভাবে চলে গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গে। এরপর তিনি শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে আইএসসি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে তিনি ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে।
অমর্ত্য সেন ১৯৫৩ সালে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে বি.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর তিনি অর্থনীতি নিয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহন করেন ইংল্যাণ্ডে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে। ১৯৫৬ সালে তিনি প্রথম শ্রেণীতে বি.এ (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বছরই তিনি কেমব্রিজের মজলিসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
এরপর অমর্ত্য সেন ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে পি. এইচ.ডি ডিগ্রির জন্য ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে দুই বছরের ছুটিতে তিনি কলকাতা ফিরলে সদ্য প্রতিষ্ঠিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং অর্থনীতি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান হিসেবে কাজ করেন।সেখানে দুই বছর অধ্যাপনা করার পর ১৯৫৯ সালে তিনি ট্রিনিটি কলেজে তার পি.এইচ.ডি ডিগ্রি শেষ করার জন্য ফিরে যান।
সেখানে তিনি ফেলোশিপ অর্জন করেন যা তাঁকে পরবর্তী চার বছর যে কোন কাজ করার সুযোগ এনে দেয়। তিনি দর্শনশাস্ত্রে অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত নেন। দর্শনশাস্ত্রের জ্ঞান তাকে পরবর্তীকালে তার গবেষণা কাজে অনেক সাহায্য করে।
অমর্ত্য সেন মাত্র ২৩ বছর বয়সে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা এবং পূর্ণ অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্তহন। ১৯৬০-৬১ সালে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, কর্ণেল বিশ্বদ্যিালয়, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাট বার্কলেতে ভিজিটিং অধ্যাপক ছিলেন।
অমর্ত্য সেনের প্রথম স্ত্রী নবনীতা দেব সেন। তবে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায় ১৯৭১ সালে। ১৯৭৩ সালে তিনি আবার বিয়ে করেন এভা কলোর্নিকে। ১৯৮৫ সালে তিনি ক্যান্সারে মারা যান। দ্বিতীয় স্ত্রী মারা গেলে ১৯৯১ সালে তিনি এমা জর্জিনাকে বিয়ে করেন।
১৯৭২ সালে তিনি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স এ অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এরপর ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসাবে অর্থনীতিও দর্শন পড়িয়েছেন।
অমর্ত্য সেন ১০২টি সম্মানসূচক ডিগ্রি লাভ করেছেন। জনকল্যান অর্থনীতি এবং গণদারিদ্র্যের অন্তর্নিহিত কার্যকারণ বিষয়ে তাঁর গবেষণার জন্য অর্থনীতিতে তার জীবনে নোবেল প্রাপ্তির মতো বড় সাফল্যটি এনে দেয়। ১৯৯৮ সালে অমর্ত্য সেন অর্থনীতিতে ”নোবেল স্মারক” পুরস্কার অর্জন করেছেন।
অমর্ত্য সেনের লেখা গ্রন্থাবলি ৩০টিরও বেশি ভাষায় অনুদিত হয়েছে।
অমর্ত্য সেনই জাতিসংঘের বিভিন্ন দেশের শিক্ষা এবং মানব সম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য মানব উন্নয়ন সূচক আবিষ্কার করেন। তিনিই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক না হয়েও ন্যাশনাল হিউম্যানিটিস মেডালে ভূষিত হন।
বর্তমানে তিনি টমাস ডার্লিউ ল্যামন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক অধ্যাপক এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন।
পাশাপাশি তিনি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান’ হেলথ ইমপ্যাক্ট ফান্ডের’ অ্যাডভাইজারি বোর্ড অব ইনসেন্টিভ ফর গ্লোবাল হেলথ এর সদস্য।
তিনিই প্রথম ভারতীয় শিক্ষাবিদ যিনি অক্সব্রিজ কলেজের প্রধান হন। এছাড়াও তিনি প্রস্তাবিত নালন্দা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবেও কাজ করেছেন।
অমর্ত্য সেন বাঙালির গর্ব হয়েও আজ তিনি বিশ্বনাগরিক।
Posted ৭:৫৩ এএম | বৃহস্পতিবার, ০৯ মার্চ ২০২৩
| admin
এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।